Friday, August 2, 2019

// //

পবিত্র মিলাদ ও কিয়াম শরীফ প্রসঙ্গে কিছু কথা


***পবিত্র মিলাদ-কিয়াম শরীফ প্রসঙ্গে কিছু কথা***
"কেন এক মুসলমান আরেক মুসলমানের প্রতি কাদা নিক্ষেপ করছেন??... চার মাযহাবে তো অনেক মাসআলা নিয়ে এখতেলাফ রয়েছে; কিন্তু, কেউ তো আরেক মাযহাব কে ভ্রান্ত বলছেন না; এক মাযহাবে যেটা জায়েয- অন্য মাযহাবে সেটা আরেক দলীলের ভিত্তিতে হারাম বলা হয়েছে; অথচ, দুটিই সঠিক। [আর, মিলাদে কিয়াম শরীফ হারাম নয়; বরং, এটা মুস্তাহাব- মুস্তাহ্সান। অবশ্য, কোরআন শরীফ তিলাওয়াত, দরুদ শরীফ বা, মিলাদ-কিয়াম এবং আযান গান-বাজনা সহকারে হারাম।] চার মাযহাবই পূর্নাঙ্গভাবে সঠিক ও যে কেউ এগুলোর যেকোন একটা অনুসরণ করতে পারেন। চার ইমামের মাঝে তো কোন সময় এভাবে 'কাদা' নিক্ষেপের প্রতিযোগিতা দেখা যায়নি- বরং, উনারা এগুলো থেকে মুক্ত ছিলেন। উনারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।। তাহলে,আমরা কেন একটা মুস্তাহাব- মুস্তাহসান বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করবো?- অথচ- 'ধর্মে কোন বাড়াবাড়ির নিয়ম নেই'। আপনারা অন্য দলীলের ভিত্তিতে মিলাদ-কিয়াম না পালন করলে না করেন; কিন্তু, বাড়াবাড়ি করবেন কেন?... 'গালাগালি করা বা শ্রুতিকটু কথা বলা কোন মু'মিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। ' হাজী ইমদাদুল্লাহ্‌ মুহাজেরে মক্কী (রহঃ) পর্যন্ত মিলাদ-কিয়াম পালন করে গিয়েছেন- যিনি কওমী এবং আলিয়া- উভয় শ্রেণীর আলেমের নিকটই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি নিষেধ করে গিয়েছিলেন এগুলো নিয়ে যেন কোন প্রকার বাড়াবাড়ি না হয়। আর, মাহফিলে-মিলাদ শরীফে হুজুর পোর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপস্থিত হওয়ার আকীদা প্রসঙ্গে হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (রহঃ) এর ভাষ্য এরকমঃ "এ ধরণের আকীদাকে কুফর ও শিরক বলাটা বাড়াবাড়ি মাত্র। এটা কুরআন-হাদিস ও যুক্তি- উভয় মতে সম্ভব; এবং অনেক জায়গায় এ ধরণের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার প্রমাণও রয়েছে। যদি কেউ সন্দেহ করে যে, হুজুর (সাঃ) কিভাবে অবগত হবেন এবং একই সাথে কিভাবে কয়েক জায়গায় তাশরীফ নিয়ে যাবেন- তাহলে এটাকে খুবই দুর্বল সন্দেহ বলে ধরে নিতে হবে। হুজুর (সাঃ) এর ইলম ও রুহানিয়াতের বিস্তৃতি সম্পর্কে বিশুদ্ধ রেওয়ায়েত এবং আহলে কাশফের প্রত্যক্ষ দর্শন দ্বারা যা প্রমাণিত- এর সামনে এ ধরণের ধারণা বাতুলতা মাত্র। তা ছাড়া আল্লাহর কুদরতের বেলায় কারো নাক গলাবার অবকাশ নেই। এটাও হতে পারে যে, হুজুর (সাঃ) আপন জায়গায় অবস্থান করবেন এবং মধ্যবর্তী পর্দাটা অপসারিত হয়ে যাবে। যে কোন অবস্থায় এটা সম্ভব। এর দ্বারা হুজুর (সা:) এর ক্ষেত্রে সত্তাগত অদৃশ্য জ্ঞান- যা আল্লাহ্‌ তা'আলার জন্য খাস- সেটাও প্রতিভাত হয় না। সত্তাগত ইলমে গায়েব বা অদৃশ্য জ্ঞান ওটাকে বলা হয়- যেটা অদৃশ্য জ্ঞানীর সত্তার সাথে সম্পৃক্ত; অর্থাৎ, যে সত্তাগতভাবে অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত, যাকে কারো বলে দেয়ার প্রয়োজন হয় না। এ ধরণের অদৃশ্য জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ্‌ তা'আলার জন্য খাস। আর, যে জ্ঞান খোদা তা'আলা প্রদত্ত- ওটা সত্তাগত নয়। এ ধরণের জ্ঞান মাখলুকের বেলায় শুধু সম্ভব নয়; বরং এর ভূরি ভূরি নজির রয়েছে। ইলকা, ইলহাম ও ওহী- এ ধরণের জ্ঞানেরই পর্যায়ভুক্ত। তাই, সম্ভবপর কোন বিষয়ের আকীদা কিভাবে কুফর বা শিরক হতে পারে?" ['ফাসায়েলে হাফতে মাসায়েল'- লেখকঃ 'হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (রহঃ)' থেকে বঙ্গানুবাদকৃত। ] তৎকালীন সময়ে এ বিষয়ে কথা বলাতে উনাকে নিয়ে অনেকে হাসাহাসি করেছেন, অনেকেই 'পাগল' বলে আখ্যায়িত করেছেন। ফলশ্রুতিতে, উনি মন খারাপ করে ভারত উপমহাদেশ ত্যাগ করে নিজ জন্মভূমি মক্কা শরীফে চলে যান। 'যিনি মিলাদ-কিয়াম করবেন- উনি করুন- এতে বাধা দেওয়ার কিছু নেই- কারণ, এটা মুস্তাহাব এবং মুস্তাহসান আমল। ' আর, কেউ পালন না করলেও সমস্যা নেই- কিন্তু, 'বাড়াবাড়ি' করা হয় কেন???... [মিলাদ-কিয়ামের কোন মাহফিলে উপস্থিত হলে কোন ব্যক্তি এটা পালনের অভ্যাস না থাকলেও দাঁড়ানোটা আদব; না দাঁড়ালে সেটা বেয়াদবির শামিল। যে কোন বিবেকবান ব্যক্তিই এটা উপলব্ধি করতে সক্ষম। ]
অতএব, 'আন্দোলনের জন্য এটা কস্মিনকালেও কোন টপিক হতে পারে না'; বরং, 'সুদ, ঘুষ, বেপর্দা, দুর্নীতি, প্রতারণা, নাস্তিকতা, মানবতা বিরোধী কাজ- এগুলোর বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে হবে। ' 'মুস্তাহাব কোন বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করা মোটেও সমীচীন নয়।। '
তাই, চলুন, কোন প্রকার বাড়াবাড়ি না করে আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত সকল মুসলমান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একতাবদ্ধ হয়ে সমাজে অবস্থান করি। পরস্পরের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে একে-অন্যকে সাহায্য করি।। "
***