Showing posts with label শিক্ষামূলক গল্প. Show all posts
Showing posts with label শিক্ষামূলক গল্প. Show all posts

Sunday, January 26, 2020

// // Leave a Comment

পরীক্ষা

 একদা শেখ আবু সাঈদ মাইখারানী (রহঃ) হযরত বায়েযীদ (রহঃ) কে পরীক্ষা করার জন্য তাহার নিকটে গেলেন। হযরত বায়েযীদ (রহঃ) তাহা বুঝিতে পারিয়া তাহাকে বলিলেন, “হে আবু সাঈদ, রাঈ' নামক মুরীদের নিকট গমন কর। আমি কারামত ও বেলায়েত তাহার হাতে সোপর্দ করিয়া দিয়াছি। আবু সাঈদ মাইখারানী আবু সাঈদ রাঈর বাসস্থানে যাইয়া দেখিলেন, তিনি মাঠে এক জায়গায় নামাজ পড়িতেছেন এবং তাঁহার বকরীগুলোকে নেকড়ে বাঘেরা পাহারা দিতেছে। আবু সাঈদ রাঈ (রহঃ) নামাজ হইতে অবসর গ্রহণ করিয়া মাইখারানী (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি কী চান?” তিনি উত্তর করিলেন, “গরম রুটি এবং তাজা আঙ্গুর। " হযরত আবু সাঈদ রাঈ (রহঃ) নিজের হাতের লাঠিটি দ্বিখন্ডিত করিয়া এক খন্ড মাইখারানীর সম্মুখে মাটিতে পুতিয়া দিলেন, অপর খন্ডটি নিজের সম্মুখে পুতিলেন। তৎক্ষণাৎ লাঠির উভয় অংশ সবুজ এবং সতেজ বৃক্ষের রূপ ধারণ করিয়া মাইখারানীর সম্মুখস্থ খন্ডে কাল এবং আবু সাঈদ রাঈ'র সম্মুখের খন্ডে সাদা আঙ্গুর ফল ধরিল। মাইখারানী (রহঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমার অংশে কাল এবং আপনার অংশে সাদা আঙ্গুর ধরার কারণ কী?” আবু সাঈদ রাঈ (রহঃ) বলিলেন, “যেহেতু আমি খাঁটি নিয়্যতে বিশ্বাসের সহিত চাহিয়াছি। আর, আপনি পরীক্ষার নিয়্যতে চাহিয়াছেন; সুতরাং ইহা অবধারিত সত্য যে, প্রত্যেক বস্তুর বর্ণ উহার অবস্থার অনুরূপ হইয়া থাকে। " অতঃপর তিনি আবু সাঈদ মাইখারানীকে এক খানা কম্বল দিয়া বলিলেন, “ইহা খুবই হেফাযতে রাখিবেন যেন হারাইয়া না যায়। আবু সাঈদ মাইখারানী হজ্জ্বে গমন করিলে আরাফাতের ময়দানে কম্বলখানি তাহার নিকট হইতে গায়েব হইয়া যায়। বস্তামে প্রত্যাগমন করিয়া ঠিক সেই কম্বলখানিই আবু সাঈদ রাঈ' (রহঃ) এর নিকট দেখিতে পান!
- তাযকেরাতুল আওলিয়া। (১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৮৯)

Image by bess.hamiti@gmail.com from Pixabay ***
Read More
// // 1 comment

অভিমানী তোতা


 এক আতর বিক্রেতার একটি তোতা পাখি ছিল। পাখিটি সুমধুর সুরে আওয়াজ দিতে পারিত। আতর বিক্রেতা তোতাকে দেখাশোনার জন্য রাখিত। ঐ তোতা মানুষের ন্যায় খরিদ্দারদের সাথে কথা-বার্তা বলিতে জানিত।

Read More
// // Leave a Comment

অবাক মৃত্যু

 একদা হযরত মানসূর হাল্লাজ (রহঃ) হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রহঃ) কে এক সওয়াল করেন। জুনায়েদ তাঁহার জওয়াব না দিয়া বলিলেন, “শীঘ্রই তুমি কাঠের অগ্রভাগ লাভ করিবে। ”
হুসায়েন বলিলেন, “যেদিন শূলের আগায় ঝুলিব, সেদিন আপনিও দরবেশের লেবাস ছাড়িয়া যাহেরী লোকের লেবাস পরিবেন। ”
যখন সমস্ত ধর্মবিদ-উলামা মানসূরকে কতল করার ফতোয়া দিলেন, তখন কেবল হযরত জুনায়েদ এই ফতোয়ায় দস্তখত করিলেন না, যেহেতু তিনি তখনও সূফীবেশে ছিলেন। খলীফা বলিলেন, “ফতোয়া সত্য হইলে হযরত জুনায়েদকে অবশ্যই দস্তখত করিতে হইবে। ” হযরত জুনায়েদ তখন খানকাহ্‌ হইতে উঠিয়া মাদরাসায় গেলেন এবং আলেমের লেবাস পড়িয়া ফতোয়ায় দস্তখত করিলেন। তিনি মন্তব্য লিখিলেন, “যাহেরী অবস্থামত মানসূর প্রাণদণ্ডের উপযুক্ত; আর, ফতোয়া যাহেরী অবস্থা অনুসারেই হইয়া থাকে। বাতেনী অবস্থা হক্ব তা’আলাই বিশেষরূপে জানেন। ”
কথিত আছে, তাঁহাকে যখন জেলখানায় বন্দী করা হইল- একরাত্রে জেলখানায় ৩০০ কয়েদী ছিল। তিনি সকল কয়েদীকে বলিলেন, “আমি তোমাদিগকে মুক্তি দিয়া দিব?” তাঁহারা বলিল, “কীরূপে? বাহ্‌! নিজেই বন্দী, আবার আমাদিগকে দিবেন মুক্তি! শক্তি থাকিলে আগে নিজকে মুক্ত করুন। ” তিনি বলিলেন, “আমি খোদার কয়েদী এবং শরীয়তের পায়রবি করি। অন্যথায়, ইচ্ছা করিলে তোমাদের সকল শিকল ছিঁড়িয়া ফেলিতে পারি। ” এই কথা বলিয়া তিনি আঙ্গুলে মাত্র ইশারা করিলেন, সঙ্গে সঙ্গে সকল কয়েদীর শিকল ছিঁড়িয়া গেল। তাহারা বলিল, “এখন আমরা বাহির হইব কীরূপে, জেলখানার দরজা যে বন্ধ?” আবার ইঙ্গিত করিলে জেলখানার দেওয়ালে কতকগুলি জানালা হইয়া গেল। তিনি বলিলেন, “হইল তো, যাও!” তাহারা বলিল, “আপনি আসিবেন না?” তিনি বলিলেন, “মালিকের সহিত আমার একটি গোপন ব্যাপার আছে, শূলে না চড়িয়া উহার সমাধান হইবে না। ”
পরদিন প্রহরী আসিয়া দেখিল, একটি কয়েদীও নাই। জিজ্ঞাসা করিল, “কয়েদীরা কোথায়?” তিনি উত্তরে বলিলেন, “আমি সকলকে মুক্তি দিয়া দিয়াছি। ” প্রহরী জিজ্ঞাসা করিল, “তবে আপনি কেন রহিয়া গেলেন?” তিনি বলিলেন, “আমার উপরে মালিকের ক্ষেদ আছে, সেইজন্যে অপেক্ষা করিতেছি। ” খলীফা এই সংবাদ পাইয়া বলিলেন, “যাও, যাইয়া শীঘ্র তাহাকে দোর্‌রা মারিয়া কতল করিয়া ফেল; এই গোলমাল মিটিয়া যাউক। অন্যথায়, ভীষণ গোলমাল ও ফাসাদের আশঙ্কা!” অতঃপর, তাঁহাকে বন্দীশালা হইতে বাহির করিয়া তিনশত দোর্‌রা মারা হইল। কিন্তু, ইহাতেও তিনি “আনাল হক্ব” উক্তি বন্ধ না করিয়া বরং উচ্চস্বরে ও দৃঢ়ভাবে আবৃত্তি করিতে রহিলেন। যে দোর্‌রা মারিতে ছিল- সে বলিল, আমি যখন মানসূরকে দোর্‌রা মারিতেছিলাম তখন প্রতিটি কশাঘাত হইতে স্পষ্ট আওয়ায শুনিতেছিলাম, “হে বৎস মানসূর! ভয় করিও না। ” 
তারপর তাঁহাকে শূলে চড়াইবার জন্য লইয়া যাওয়া হইল। ইহা দেখিবার জন্য প্রায় এক লক্ষ লোক জমায়েত হইল। তিনি প্রত্যেকের দিকে লক্ষ্য করিয়া বলিতে লাগিলেন, “হক্ব, হক্ব, আনাল হক্ব। ” ইতোমধ্যে একজন ফকির আসিয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “প্রেম কী?” তিনি উত্তরে বলিলেন, “তাহা আজ দেখিবে, কল্য দেখিবে এবং পরশুও দেখিবে। ” অর্থাৎ, প্রথম তাঁহাকে বধ করা হইবে, দ্বিতীয় দিন তাঁহার দেহ পোড়ান হইবে, তৃতীয় দিন তাঁহার ছাই বাতাসে উড়াইয়া দেওয়া হইবে- এইসবের প্রতি ইঙ্গিত করিয়া বলিয়া গিয়াছেন যে, ইহাই প্রেম। শূলে চড়াকালে তাঁহার খাদেম আসিয়া তাঁহার নিকট উপদেশ চাহিলে তিনি বলিলেন, “নিজকে কোন সৎকাজে মশগুল রাখিও, তাহা না হইলে নফস তোমাকে কোন বদ কাজে রত করিয়া ফেলিবে। ” তাঁহার পুত্র আসিয়া বলিল, আব্বা, আমাকে কিছু অছিয়ত করুন। তিনি বলিলেন, “বাবা, অছিয়ত এই- দুনিয়ার সবাই নেক আমলের চেষ্টায় লাগিয়া আছে; তুমি এমন কাজের চেষ্টা কর- যাহার এক রতি সারা দুনিয়ার মানুষ ও জ্বীনের আমল হইতে শ্রেষ্ঠ হয়- উহা আর কিছুই নহে- এলমে হাকীকতের এক কণা। ”
ইহার পর তিনি খুশীর সহিত ধীরে ধীরে শূলের দিকে যান। লোকে জিজ্ঞাসা করিল, “এই সময় এমন খুশীর কারণ কী?” তিনি বলিলেন, “এখন আমি আপন আস্তানার দিকে যাইতেছি। ইহার চেয়ে আমার পক্ষে আর খুশীর সময় কবে হইবে?” তারপর শূলের দিকে জোর গলায় এই কবিতার অংশ দুইটি পাঠ করিতে করিতে অগ্রসর হইতেছিলেনঃ (বঙ্গানুবাদ)
(১) “আমার বন্ধু আমার প্রতি মোটেই অবিচার করেন নাই। মেহমানকে যেমন পবিত্র ও উত্তম শরাব পান করান হয়, তিনিও আমাকে সেইরূপ শরাবই (প্রেমের শরাব) পান করাইয়াছেন। ”
(২) “শরাবের পাত্র কয়েকবার ঘুরানোর অর্থাৎ কয়েকবার পান করার পর কোষ ও তরবারিসহ আগাইবার জন্য বন্ধু আমাকে সাদরে আহবান জানাইলেন। আর, ইহাই ঐ ব্যক্তির সমুচিত সাজা, যে গরমের দিনে অজগরের সঙ্গে বসিয়া পুরাতন শরাব পান করে। ”
পরে তাঁহাকে শূলের নিকট আনা হইলে তিনি শূলের সিঁড়ি চুম্বন করিলেন এবং পরে শূলের সিঁড়িতে পা রাখিয়া বলিলেন, “বীরপুরুষের মে’রাজ শূল দন্ড। ” এই সময় কেবলার দিকে মুখ করিয়া হাত উঠাইয়া মোনাজাত করিলেন এবং বলিলেন, “যাহা চাহিয়াছিলাম, তাহা পাইয়াছি। ” যখন তিনি শূলে চড়িলেন, তখন তাঁহার মুরিদগণ জিজ্ঞাসা করিল, “হুজুর, যাহারা আপনার সহিত এরূপ নিষ্ঠুর ব্যবহার করিল, তাহাদের সম্বন্ধে এবং আমরা ও অন্যান্য যাহারা আপনার সমর্থন করি, তাহাদের সম্বন্ধে আপনার অভিমত কী?” উত্তরে বলিলেন, “যাহারা আমার সহিত নিষ্ঠুর ব্যবহার করিল, তাহাদের দ্বিগুণ সওয়াব (পূণ্য) হইবে; আর, যাহারা আমার সমর্থন করিতেছ, তাহাদের জন্য এক সওয়াব; কেননা, তোমরা কেবল আমার সম্বন্ধে ভাল ধারণাই পোষণ কর; আর তাহারা তাওহীদের শক্তি এবং শরীয়তের কঠোর বিধান- এই দু’য়ের তাড়নায় জর্জরিত হইতেছে। আর, ইসলাম ধর্মে তাওহীদ আসল; সুধারণা তাহার শাখা মাত্র। ”
কথিত আছে, মানসূর যৌবনকালে কোন স্ত্রীলোকের প্রতি নযর করিয়াছিলেন। শূলে চড়িবার পর সেই কথা স্মরণ করিয়া বলিলেন, “হায়, কী অশুভ কীর্তি আমার ঘটিয়াছিল; দীর্ঘদিন পর যাহার প্রতিশোধ আমা হইতে লওয়া হইতেছে। ”
তারপর, হযরত শিবলী (রহঃ) তাঁহার নিকট আসিয়া উচ্চস্বরে বলিলেন, “হে হাল্লাজ, তাছাউওফ বা ফকিরি কী?” উত্তরে বলিলেন, “যাহা তুমি দেখিতেছ, ইহা তাছাউওফের নিম্ন শ্রেণি মাত্র। ” হযরত শিবলী বলিলেন, তবে উচ্চ শ্রেণী কোনটি? তিনি বলিলেন, “সেই পর্যন্ত তুমি পৌঁছিতে পার নাই। ” ইহার পর লোকেরা তাঁহার প্রতি পাথর ছুঁড়িতে আরম্ভ করিল। হযরত শিবলী অন্যের দেখাদেখি মাত্র একটি মাটির ঢিল ছুঁড়িলেন- তখনই মানসূর একটি হৃদয় বিদারক “আহ্‌” বলিয়া চিৎকার করিয়া উঠিলেন। লোকে জিজ্ঞাসা করিল, এত লোকে আপনার উপর পাথর ছুঁড়িতেছে; তাহাতে কোন দুঃখ প্রকাশ করিলেন না- আর, এ সামান্য মাটির ঢিলে কেন এরূপ চিৎকার করিয়া উঠিলেন?” মানসূর বলিলেন, “তাহারা অজ্ঞান বলিয়া পাথর মারিতেছে, সুতরাং ইহাতে দুঃখ নাই; পক্ষান্তরে, হযরত শিবলী (রহঃ) আমার সম্বন্ধে বেশ জানেন, তাঁহার ঢিল ছুঁড়া সাজে না; তাঁহার সামান্য ঢিলেও মনে ভীষণ আঘাত লাগে। ”
ইহার পর শূলে প্রথমে তাঁহার হাত কাটা হইল (হাতের কবজা পর্যন্ত)। ইহাতে তিনি বলিলেন, “এই যাহেরী মানুষটির হাত কাটা সহজ বটে; কিন্তু, আমার বাতেনী হাত যাহা আরশের উপর হইতে গৌরবের তাজ টানিতেছে, তাহা কাটিবার কে আছে?” তারপর তাঁহার পা কাটিয়া হইল। তিনি হাসিমুখে বলিলেন, “যদিও এই যাহেরী পায়ের সাহায্যে দুনিয়ায় চলাফেরা করিয়াছি; কিন্তু আমার অপর পা আছে, যাহার সাহায্যে আমি বেহেশতে চলাফেরা করিতে পারিব। যদি শক্তি থাকে তবে উহা কাটিয়া ফেল দেখি?” এই বলিয়া শরীরে খুন হাতে লইয়া মুখে মাখিতে লাগিলেন। লোকে জিজ্ঞাসা করিল, “এরূপ করিতেছেন কেন?” তিনি বলিলেন, “আমার শরীর হইতে অনেক খুন বাহির হওয়ায় মুখ সাদা হইয়া গিয়াছে। ইহাতে হয়তো তোমরা মনে করিবে, ভয়ে এরূপ সাদা হইয়াছে। এজন্য খুন মুখে মাখিলাম, যেন লোকের নযরে আমার মুখ লাল দেখায়; কেননা, বীর পুরুষের মুখের রক্তিম রঙ তাহার খুনের সাহায্যেই হয়। ” লোকে জিজ্ঞাসা করিল, “হাতে রক্ত মাখিতেছেন কেন?” তিনি বলিলেন, “ওযু করিতেছি। ” লোকে বলিল, “ এ কীরূপ ওযু?” তিনি বলিলেন, “দুই রাক’আত এশকের নামায আছে, যাহা খুন দ্বারা ওযু ছাড়া শুদ্ধ হয় না। ” তারপর, তাঁহার চোখ দুইটি উঠাইয়া ফেলা হইল। ইহা দেখিয়া জনসাধারণের মধ্যে কান্নার রোল উঠিল। কেহ কাঁদিল, কেহবা তখনও পাথর নিক্ষেপ করিতে লাগিল। তারপর তাঁহার জিহবা কাটিতে চাহিলে তিনি বলিলেন, “একটু ধৈর্য ধর। আমি কিছু কথা বলিব। ” তিনি উপরের দিকে চাহিয়া বলিলেন, “এলাহী, ইহারা আমাকে যে তোমার জন্য এত দুঃখ দিল, ইহাদিগকে তোমার রহমত হইতে বঞ্চিত করিও না; সেই সম্পদ হইতে তাহাদিগকে নিরাশ করিও না। আলহামদুলিল্লাহ্‌! যদিও তাহারা আমার হাত-পা কাটিতেছে, তথাপি তাহারা তোমারই পথে। যদি তাহারা আমার মাথাও কাটিয়া ফেলে, তথাপি উহা তোমার রূপ দেখিবার আকাঙ্ক্ষায়ই করিতেছে। ” ইহার পর তাঁহার কান ও নাক কাটিয়া ফেলা হইল এবং তাঁহার উপর লোকে পাথর নিক্ষেপ করিতে লাগিল; তাঁহার শেষ বাণী এই ছিলঃ
“আমি তাওহীদের আশেক। তাওহীদের মহব্বত হইল এক কে একক জানা এবং অন্য কাহাকেও সেখানে স্থান না দেওয়া। ” ইহার পর এই আয়াত শরীফ পাঠ করিলেনঃ (বঙ্গানুবাদ) “যাহারা ঈমান আনয়ন করেনা ও কেয়ামতকে অবিশ্বাস করিয়া উহাকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে; অথচ, অন্তরে জানে যে, উহা নির্ঘাত সত্য- তাহারাই হাস্য করিয়া নবী (সাঃ) কে শীঘ্র কেয়ামত আনিয়া দেখাইতে বলে। পক্ষান্তরে, যাহারা ঈমান আনিয়া ঐ (ভয়ঙ্কর দিনের নাম শুনিলে) ভয়ে ভীত হয় ও কুকর্ম হইতে বিরত থাকে, তাহারাই কেয়ামতকে সত্য বলিয়া জানে ও প্রাণে বিশ্বাস করে। ”
ইহাই তাঁহার সর্বশেষ বাণী ছিল। তারপর তাঁহার জিহবা কাটা হইল। দিন শেষ হইল। সন্ধ্যা হইল। খলীফার হুকুম জারী হইল, “শরীর হইতে তাঁহার মাথা ছিন্ন করিয়া ফেল। ” হুকুমমত মাথা কাটিবার সময় তিনি উচ্চস্বরে হাস্য করিতে লাগিলেন। ঐদিকে লোকদের মধ্যে কান্নার রোল উঠিল। দেখিতে দেখিতে তাঁহার জীবন শেষ হইল বটে; কিন্তু, তাঁহার প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হইতে “আনাল হক্ব” আওয়ায হইতে লাগিল। তারপর, প্রত্যেক অঙ্গকে খন্ড-বিখন্ড করা হইল। কেবল গলা ও পিঠ বাকী রহিল। তখন প্রত্যেক টুকরা হইতে “আনাল হক্ব” আওয়ায উঠিতে লাগিল। তাঁহাকে কতল করার সময় যে রক্তবিন্দুটি মাটিতে পড়িত, উহাও “আনাল হক্ব” এর আকৃতি ধারণ করিত! দ্বিতীয় দিন এ অবস্থা দেখিয়া লোকে অবাক হইয়া বলিতে লাগিল, “আগে এক মুখে “আনাল হক্ব” বলিত; আর এখন শতমুখে উচ্চারিত হইতেছে। ” এই বিপদ দেখিয়া হতবুদ্ধি হইয়া মালিকপক্ষ মানসূরের সমস্ত শরীর আগুনে পুড়াইয়া ফেলিল। কিন্তু, ইহাতে বিপদ আরও বৃদ্ধি পাইল। প্রত্যেক ছাইয়ের রেণু হইতে “আনাল হক্ব” আওয়ায উঠিয়া শহর, মাঠ-ঘাট মুখরিত করিয়া তুলিল। অবশেষে উপায় না দেখিয়া খলীফা ছাইগুলি দিজলা নদীতে ফেলিয়া দিবার হুকুম করিলেন। কিন্তু আশ্চর্য! ছাই ফেলার পর নদীর পানিতে ঢেউয়ের পর ঢেউ প্রবল হইতে প্রবলতর আকার ধারণ করিতে লাগিল এবং প্রত্যেকটি ঢেউয়ের সহিত উচ্চ রব উঠিতে লাগিল “আনাল হক্ব, আনাল হক্ব। ” নদীতে তুফান আর ঢেউয়ের ভীষণ আকার দেখিয়া লোকজনের প্রাণে আতঙ্কের সৃষ্টি হইল। কতলের পূর্বেই মানসূর নিজের একজন চাকরকে বলিয়াছেন, আমার দেহের পোড়া ছাইগুলি যখন নদীতে ফেলিয়া দেওয়া হইবে, তখন বাগদাদ নগরে কেয়ামতের মত অবস্থার সৃষ্টি হইবে। নগর রক্ষার কোন উপায় না দেখিলে আমার খেরকাটি নিয়া দিজলা নদীকে দেখাইও; ইহাতেই নদী শান্ত হইবে। ” চাকর নদীর ভয়াবহ অবস্থা দেখিয়া তাহাই করিল। আগুনের মধ্যে পানি ফেলিলে যেমন মুহূর্তের মধ্যে উহা নিভিয়া যায়, সেইরূপ খেরকা দেখার সঙ্গে সঙ্গে নদী শান্তভাব ধারণ করিল এবং নিক্ষিপ্ত ছাইগুলি আসিয়া নদীর কিনারায় জড় হইল- সেই ছাই কুড়াইয়া আনিয়া দাফন করা হয়। সত্যিই, কোন তাপসই উক্ত পথে তাঁহার ন্যায় জয়ী হইতে পারেন নাই। ”
-তাযকেরাতুল আওলিয়া। (দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ২২৬- ২৩৫)

Image by Myléne from Pixabay ***

Read More

Friday, August 2, 2019

// // 1 comment

সত্যপথ প্রাপ্তি

 হযরত ইবরাহীম আদ্‌হাম (রহঃ) ছিলেন বলখের প্রতাপশালী বাদশাহ্‌। এক বিশাল রাজ্য ছিল তাঁহার শাসনাধীন। তিনি যখন ভ্রমণে বাহির হইতেন, তখন ৪০ জন করিয়া স্বর্ণের ঢাল ও রৌপ্যের গুর্জধারী সৈন্য তাঁহার অগ্রে ও পশ্চাতে তাঁহার দেহরক্ষীরূপে মোতায়েন থাকিত। 
একদা শাহী মহলে গভীর রাত্রে
Read More
// // Leave a Comment

অত্যাচারী এক বাদশাহের গল্প

 একাদশ শতাব্দীর প্রথমে অত্যাচারী ইসলাম বিরোধী সম্রাট আকবরের যুগে হযরত শায়েখ আহ্‌মাদ মোজাদ্দেদে আলফে সানী (রহঃ) ছিলেন। 
সম্রাট আকবর ইসলাম ধর্মের ভয়াবহ শত্রু হিসাবে দণ্ডায়মান হইয়াছিল।
Read More
// // Leave a Comment

বাদ্যযন্ত্র সমাচার

 এক রাত্রিতে হযরত বায়েযীদ (রহঃ) কবরস্থানের দিকে যাইতেছেন, এমন সময়ে বস্তাম শহরের কোন নেতৃস্থানীয় লোকের এক যুবক পুত্র বাদ্য-যন্ত্র বাজাইয়া তাহার সম্মুখ দিয়া যাইতেছিল।
Read More

Monday, May 28, 2018

// // Leave a Comment

হাতুড়ে ডাক্তারের কীর্তি

 পীরের উদাহরণ ঠিক যেন একজন ডাক্তার। ডাক্তার যদি হাতুড়ে হয় তাহলে আবার রোগীর জান বাঁচানো বিপদ। যেমন একটা প্রবাদ আছেঃ
মূর্খ ডাক্তারে জানের বিপদ,
মূর্খ মোল্লায় ঈমানের বিপদ। 
কোন কোন মূর্খ পীর রয়েছে সব অনুসারীকে একই পাল্লায় ওজন করে থাকে। এই কারণেই মানুষের সংশোধন এবং রূহানী উন্নতি হয় না। যেমন এক মূর্খ ডাক্তারের ঘটনা রয়েছেঃ
রোগী দেখার জন্যে তাকে ডাকা হলো।
Read More

Tuesday, April 24, 2018

// // Leave a Comment

অপব্যয়ের অভিনব সংজ্ঞা

 এক ব্যক্তির ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় অত্যন্ত অভাবে পড়েছিল। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে এক বুযুর্গের কাছে গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করলো। 
বুযুর্গ তার অভাবের কথা শুনে ব্যথিত হলেন এবং বললেন, “সাহায্য করার মত আমার কাছে কিছু নাই। তবে আমার এক বিত্তবান বন্ধু আছেন; তার কাছে গিয়ে আমার কথা বললে আশা করি সাহায্য করবেন। ”
Read More
// // Leave a Comment

আল্লাহর ভয়

 বনী ইসরাঈল গোত্রে একজন আবেদ লোক ছিলেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে দরিদ্র অবস্থায় জীবন-যাপন করতেন। একদা জঠর জ্বালায় অস্থির হয়ে সন্তানদের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে তিনি স্ত্রীকে বাহিরে পাঠালেন।
Read More

Thursday, April 12, 2018

// // Leave a Comment

আল্লাহর ইচ্ছাই হোক পূর্ণ



 আল্লাহ পাকের ইচ্ছার সাথে নিজের ইচ্ছাকে মিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই আনন্দ।  এই আনন্দ আল্লাহওয়ালাগণ পরিপূর্ণভাবে লাভ করে থাকেন।  এইরূপে এক বুযুর্গ ছিলেন শাহ্‌ দৌলাহ্‌।  তাঁর গ্রামের লোকেরা একদিন তাঁর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলোঃ
   “হুজুর! নদী ভাঙতে ভাঙতে গ্রামের দিকে ছুটে আসছে।  
Read More

Wednesday, April 11, 2018

// // Leave a Comment

সর্বশ্রেষ্ঠ কারামত


 হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রহঃ) –এর খেদমতে এক ব্যক্তি এসে দশ বৎসর থাকলো।  দশ বৎসর পর সে বললো, “হযরত! এতকাল থেকে আপনার খেদমতে আছি; কিন্তু কোন কারামত দেখলাম না!”
Read More
// // Leave a Comment

জুতা সোজা করার বরকত


সরলতা মানুষকে জান্নাতের পথে নিয়ে যায়।  এরূপ সরলতা ও বিনয়ের এক ঘটনা মনে পড়ে গেছে।
 মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সাহেব ভূপালে অবস্থান করতেন।  একবার সেই এলাকার নওয়াবের বেগম সাহেবা দ্বীনি প্রয়োজনে তারঁ সঙ্গে দেখা করতে হাজির হলেন। 
Read More
// // Leave a Comment

ঘোড়ার মালিকের বিপদ



আল্লাহ্‌ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্যে যা করতে হয় করে যাও।  লোকে কী বলবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করিও না।  কারণ, একসঙ্গে সবাইকে সন্তুষ্ট করা যাবে না।  তাহলে ঘোড়ার মালিকের অবস্থা হবে-
   এক ব্যক্তি তার ঘোড়ায় চড়ে সফরে বাহির হলো।  সঙ্গে তার বউ এবং ছেলে হেঁটে যাচ্ছিল। 
Read More

Monday, February 19, 2018

// // Leave a Comment

সৌভাগ্যবান এক ব্যক্তির ঘটনা


এক ব্যক্তি হযরত জা’ফর ছাদেক (রহঃ) এর নিকট আসিয়া বলিল, “আমাকে আল্লাহ পাকের দীদার লাভ করাইয়া দিন। আমি যেন তাঁহাকে আমার বাহ্য চক্ষু দ্বারা প্রকাশ্যে দেখিতে পাই। ” হযরত জা’ফর ছাদেক বলিলেন, “তুমি কি শুন নাই যে,
Read More
// // Leave a Comment

জমিদার বাবুর আল্লাহ্‌ দেখার ঘটনা

এক জমিদার ছিল। তার কোন কিছুরই অভাব ছিল না। একদিন সে ভাবলো, জীবনে অনেক কিছুই পেলাম, অনেক কিছুই দেখলাম। কিন্তু, একটা জিনিস দেখতে পেলাম না। এই জিনিসটা দেখতে পেলেই আমার জীবনের সকল সাধ পূর্ণ হয়। 
Read More
// // Leave a Comment

‘আমীন’ তিন প্রকার!

কোন কোন গায়র মুকাল্লেদ (তথাকথিত আহলে হাদীস) এক আশ্চর্য বস্তু বটে। এবাদতের মধ্যেও তারা হিংসা প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করে না। 
নামাজের মধ্যে সশব্দে ‘আমীন’ বলা নিঃসন্দেহে একটি সুন্নত আমল। 
Read More
// // Leave a Comment

খলীফা মনছুর

হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে বাগদাদের খলীফা মনছুর হযরত জা’ফর ছাদেকের বিরাট ব্যক্তিত্ব এবং তাঁহার প্রতি জনসাধারণের অগাধ শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা দেখিয়া নিজের রাজত্ব সম্বন্ধে ভীত ও শঙ্কিত হইয়া পড়িলেন। তাই তিনি এক রাত্রে স্বীয় উযীরকে ডাকিয়া বলিলেন, ‘যাও, জা’ফর ছাদেককে ডাকিয়া আন, আমি তাহাকে হত্যা করিব। ’
Read More

Saturday, January 27, 2018

// // Leave a Comment

যার নাই উস্তাদ, তার উস্তাদ শয়তান

সাধারণ লোকেরা কোরআন শরীফের বাংলা তরজমা নিজে নিজেই পড়ে থাকে। কোন উস্তাদের কাছে যায় না। ফলে, এই গভীর জ্ঞান-সাগর পাড়ি দেওয়ার কৌশল জানা না থাকার কারণে নানা রকম সন্দেহে পতিত হয়। আবার এই সন্দেহ দূর করার জন্যে কোন মোহাক্কেক আলেমকেও জিজ্ঞাসা করে না।
Read More

Wednesday, December 13, 2017

// // Leave a Comment

শিয়া সাহেবের চুমা-চাটা

জালালাবাদে একবার হুযুর পাক (সাঃ) এর কথিত জুব্বা মোবারক এর প্রদর্শনী হচ্ছিল।
সেখানে কোরআন শরীফের এমন একটি কপিও প্রদর্শিত হচ্ছিল যা হযরত আলী (রাঃ) -এর স্বহস্তে লিখা বলে কথিত ছিল।
Read More
// // Leave a Comment

সাপের তওবা

এক সাপ তার জীবনে কতবার দংশন করেছে আর আল্লাহর কত মাখলুককে কষ্ট দিয়েছে সেই চিন্তা করে বিচলিত হয়ে পড়লো। এখন তওবা করে ভালো হয়ে যাবে এই চিন্তা করে সে এক পীরের কাছে গিয়ে মুরীদ হলো
Read More