একাদশ শতাব্দীর প্রথমে অত্যাচারী ইসলাম বিরোধী সম্রাট আকবরের যুগে হযরত শায়েখ আহ্মাদ মোজাদ্দেদে আলফে সানী (রহঃ) ছিলেন।
সম্রাট আকবর ইসলাম ধর্মের ভয়াবহ শত্রু হিসাবে দণ্ডায়মান হইয়াছিল।
(সম্রাট আকবর দৈনিক চারিবার সূর্য্যের উপাসনা করিত ও উহার হিন্দী ভাষায় এক হাজার এক নাম অজিফা স্বরূপ পাঠ করিত। নিজে পৈতা ধারণ করিত। তারকারাজিরও পূজা করিত। পুনর্জন্মের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখিত। তাহার দীন-ই-এলাহীর কলেমা ছিল- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবার খলিফাতুল্লাহ্” । সালামের পরিবর্তে সাক্ষাৎকালীন সময়ে একজন বলিত “আল্লাহু-আকবর” ও অপরজনে বলিত “জাল্লা- জালালুহু”। সম্রাট আকবর প্রকারান্তরে স্বীয় নাম “আল্লাহ্” হিসাবে প্রবর্তিত করার নিয়তে এইরূপ করিয়াছিল; যেহেতু, ‘আকবর’ ও ‘জালাল’ তাহারই নামের অংশ মাত্র। (নাউযুবিল্লাহ্ )
তাহার মোহরে অঙ্কিত ছিল “জাল্লা- জালালুহু মা আকবারা শানুহু”।
-মোন্তাখাবাত তাওয়ারিখ। )
তখন মুসলমানদিগের দুরবস্থার সীমা ছিল না। ভারতবর্ষে কোন ইসলামী কানুন জারী করিলে তাহাকে বধ করা হইত। দৈনিক শত শত লোক সম্রাটকে সেজদা করার জন্য আনিত হইত। সেজদা না করিলে সে নিহত হইত। গরু জবাহ্ পূর্ণরূপে বন্ধ হইয়াছিল। তাহার উজির ‘আবুল ফজল’ সম্রাটকে একখানা পুস্তক আনিয়া দিয়া বলিয়াছিল যে, ইহা আসমানী কেতাব। ফেরেশতা ইহা লইয়া আসিয়াছে! সম্রাট তাহাই বিশ্বাস করিয়া উহার মধ্যে লিখিত কানুন প্রচারের আদেশ প্রদান করিয়াছিল। উল্লিখিত পুস্তকে লিখিত ছিল “ইয়া আয়্যুহাল বাশার লা তাজবাহেল বাকার। ইন তাজবাহেল বাকার ফা মাওয়াকাছ ছায়ার। ” অর্থাৎ, হে মানব, তোমরা গো-হত্যা করিও না। যদি করো, তবে তোমাদের স্থান নরকে হইবে। সুদ-জুয়া হালাল করা হইয়াছিল। মদ্য পান, দাড়ী মুন্ডন জায়েজ করা হইয়াছিল। ফরজ গোছল রহিত করা হইয়াছিল। ‘পর্দা’ ও ‘খাৎনা’ প্রথা উঠাইয়া দেওয়া হইয়াছিল। উক্ত ধর্মকে ‘দীন-এ-এলাহী’ নাম দেওয়া হইয়াছিল। ফলকথা, ইসলাম যখন চরম দুর্দশার সম্মুখীন হইয়াছিল, সেই সময় হযরত মোজাদ্দেদে আলফে সানী (রহঃ) এর আবির্ভাব হয়। তিনি উল্লিখিত প্রকারের অত্যাচার-অবিচার দেখিয়া সম্রাটের দরবারে তাঁহার যে সকল মুরিদান ছিল; যথাঃ- খান খানান, খানে আজম, সৈয়দ ছদরে জাহান এবং মোর্তজা খান ও মাহাবৎ খান প্রমুখের নিকট সংবাদ দিলেন যে, সম্রাট যখন ইসলাম ধর্ম হইতে বিমুখ হইয়াছে, তখন তোমরা তাহাকে আমার পক্ষ হইতে বলিয়া দাও যে, তাহার বাদশাহী ক্ষণস্থায়ী ও তাহার আড়ম্বর চলিয়া যাইবে। আল্লাহ্ তা’আলা প্রতিশোধ লইবেন; ফেরেশতা আজাব লইয়া আসিবে; তাহার দুর্গ, সৈন্য সবই ধ্বংস হইবে। অতএব, তাহার উচিত যে, তওবা করতঃ এ সকল অসৎ কার্য্য হইতে বিরত থাকে, নতুবা আল্লাহর গজব নাজেল হইবে। উক্ত মুরীদান সম্রাট আকবরকে বহুপ্রকার উপদেশাদি দিল, কিন্তু কোনই ফল হইল না। তৎপর তাহারা হযরত মোজাদ্দেদে আলফে সানী (রহঃ)-এর আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ভীতি-প্রদর্শন করিয়া এবং অনেক বুঝাইয়া মাত্র এই পর্যায়ে উপনীত করিল যে, বলপূর্বক যে সমস্ত কার্য্য করিতে বাধ্য করা হইত- তদস্থলে সর্বসাধারণকে অধিকার দেওয়া হইল। যাহার ইচ্ছা সেজদা করিবে এবং যাহার ইচ্ছা করিবে না।
কিছুদিন পর সম্রাট আকবর দুইটি দরবার নির্মাণ করিল- একটি ‘মোহাম্মদি দরবার’ তাহা সকল প্রকার ছিন্ন তাবু, ছিন্ন ফরাস বস্ত্রাদি দ্বারা নির্মাণ করিল; অপরটি ‘আকবরী দরবার’ তাহাতে নতুন নতুন তাবু, ফরাস, সুন্দর গালিচা, মখমল-জরিদার কারুকার্য-খচিত বিছানা ইত্যাদি ছিল; এবং মোহাম্মদি দরবারের জন্য আড়ম্বরবিহীন সাধারণ খাদ্য ছিল ও আকবরী দরবারের জন্য নানাপ্রকার সুমিষ্ট খাদ্য, ফল-মূল ইত্যাদি সংগৃহীত হইয়াছিল। সম্রাটের আদেশ, যাহার যে দরবারে প্রবেশ করার ইচ্ছা, সে তথায় প্রবেশ করিতে পারে। লোভী দুনিয়াদার ব্যক্তিগণ সকলেই আকবরী দরবারে প্রবেশ করিল এবং দীনদার সাধু ব্যক্তিগণ হযরত ইমামে রব্বানি (রহঃ)-এর সহিত মোহাম্মদি দরবারে প্রবেশ করিলেন। সম্রাট আকবর স্বীয় প্রাসাদে উপবেশন করতঃ উক্ত ঘটনা অবলোকন করিতে লাগিল। যখন উভয় দল আহারে প্রবৃত্ত হইল , তখন হযরত ইমামে রব্বানি (রহঃ)- এক ব্যক্তিকে বলিলেন, “তুমি যাও, মোহাম্মদি দরবারের চতুষ্পার্শে যষ্ঠি দ্বারা একটি বৃত্তাকার আঁক দিয়া আসো এবং একমুষ্ঠি ধুলি তাহাকে দিলেন যে, ইহা সম্রাটের গৃহের দিকে নিক্ষেপ করো। ” সে ব্যক্তি উক্তরূপ করিবামাত্র উত্তরদিক হইতে একটি ঘূর্ণিবায়ু উঠিয়া আকবরী দরবারের তাবু, বিছানা, খাদ্যের বাসন-পত্র উলট-পালট করিয়া দিল এবং তাবুর স্তম্ভগুলি উঠিয়া তাহাদের মস্তকে আঘাত করিল লাগিল। অবশেষে, সম্রাটের মস্তকেও সাতটি কঠিন আঘাত লাগিল। যাহার ফলে কয়েকদিন পরই সম্রাট ইহজগত হইতে চিরতরে বিদায় গ্রহণ করিল। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় যে, মোহাম্মদি দরবারের মধ্যে উহার একটি ধূলিকণাও প্রবেশ করিল না। তাহারা শান্তির সহিত আহার সম্পন্ন করিয়া তথা হইতে প্রস্থান করিলেন। এই ঘটনা হযরত মোজাদ্দেদে আলফে সানী (রহঃ) -এর সমাজ সংস্কারের পঞ্চম বর্ষে ঘটিয়াছিল।
- মাকতুবাতে রব্বানী। লেখকঃ হযরত মোজাদ্দেদে আলফে সানী (রহঃ)। ১ম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ১১-১৩ । [কিতাবের প্রারম্ভের হযরত আলফে সানী (রহঃ)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী থেকে লেখাটি সংগৃহীত হয়েছে। ]
***
সম্রাট আকবর ইসলাম ধর্মের ভয়াবহ শত্রু হিসাবে দণ্ডায়মান হইয়াছিল।
(সম্রাট আকবর দৈনিক চারিবার সূর্য্যের উপাসনা করিত ও উহার হিন্দী ভাষায় এক হাজার এক নাম অজিফা স্বরূপ পাঠ করিত। নিজে পৈতা ধারণ করিত। তারকারাজিরও পূজা করিত। পুনর্জন্মের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখিত। তাহার দীন-ই-এলাহীর কলেমা ছিল- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবার খলিফাতুল্লাহ্”
তাহার মোহরে অঙ্কিত ছিল “জাল্লা- জালালুহু মা আকবারা শানুহু”।
-মোন্তাখাবাত তাওয়ারিখ। )
তখন মুসলমানদিগের দুরবস্থার সীমা ছিল না। ভারতবর্ষে কোন ইসলামী কানুন জারী করিলে তাহাকে বধ করা হইত। দৈনিক শত শত লোক সম্রাটকে সেজদা করার জন্য আনিত হইত। সেজদা না করিলে সে নিহত হইত। গরু জবাহ্ পূর্ণরূপে বন্ধ হইয়াছিল। তাহার উজির ‘আবুল ফজল’ সম্রাটকে একখানা পুস্তক আনিয়া দিয়া বলিয়াছিল যে, ইহা আসমানী কেতাব। ফেরেশতা ইহা লইয়া আসিয়াছে! সম্রাট তাহাই বিশ্বাস করিয়া উহার মধ্যে লিখিত কানুন প্রচারের আদেশ প্রদান করিয়াছিল। উল্লিখিত পুস্তকে লিখিত ছিল “ইয়া আয়্যুহাল বাশার লা তাজবাহেল বাকার। ইন তাজবাহেল বাকার ফা মাওয়াকাছ ছায়ার। ” অর্থাৎ, হে মানব, তোমরা গো-হত্যা করিও না। যদি করো, তবে তোমাদের স্থান নরকে হইবে। সুদ-জুয়া হালাল করা হইয়াছিল। মদ্য পান, দাড়ী মুন্ডন জায়েজ করা হইয়াছিল। ফরজ গোছল রহিত করা হইয়াছিল। ‘পর্দা’ ও ‘খাৎনা’ প্রথা উঠাইয়া দেওয়া হইয়াছিল। উক্ত ধর্মকে ‘দীন-এ-এলাহী’ নাম দেওয়া হইয়াছিল। ফলকথা, ইসলাম যখন চরম দুর্দশার সম্মুখীন হইয়াছিল, সেই সময় হযরত মোজাদ্দেদে আলফে সানী (রহঃ) এর আবির্ভাব হয়। তিনি উল্লিখিত প্রকারের অত্যাচার-অবিচার
কিছুদিন পর সম্রাট আকবর দুইটি দরবার নির্মাণ করিল- একটি ‘মোহাম্মদি দরবার’ তাহা সকল প্রকার ছিন্ন তাবু, ছিন্ন ফরাস বস্ত্রাদি দ্বারা নির্মাণ করিল; অপরটি ‘আকবরী দরবার’ তাহাতে নতুন নতুন তাবু, ফরাস, সুন্দর গালিচা, মখমল-জরিদার কারুকার্য-খচিত বিছানা ইত্যাদি ছিল; এবং মোহাম্মদি দরবারের জন্য আড়ম্বরবিহীন সাধারণ খাদ্য ছিল ও আকবরী দরবারের জন্য নানাপ্রকার সুমিষ্ট খাদ্য, ফল-মূল ইত্যাদি সংগৃহীত হইয়াছিল। সম্রাটের আদেশ, যাহার যে দরবারে প্রবেশ করার ইচ্ছা, সে তথায় প্রবেশ করিতে পারে। লোভী দুনিয়াদার ব্যক্তিগণ সকলেই আকবরী দরবারে প্রবেশ করিল এবং দীনদার সাধু ব্যক্তিগণ হযরত ইমামে রব্বানি (রহঃ)-এর সহিত মোহাম্মদি দরবারে প্রবেশ করিলেন। সম্রাট আকবর স্বীয় প্রাসাদে উপবেশন করতঃ উক্ত ঘটনা অবলোকন করিতে লাগিল। যখন উভয় দল আহারে প্রবৃত্ত হইল , তখন হযরত ইমামে রব্বানি (রহঃ)- এক ব্যক্তিকে বলিলেন, “তুমি যাও, মোহাম্মদি দরবারের চতুষ্পার্শে যষ্ঠি দ্বারা একটি বৃত্তাকার আঁক দিয়া আসো এবং একমুষ্ঠি ধুলি তাহাকে দিলেন যে, ইহা সম্রাটের গৃহের দিকে নিক্ষেপ করো। ” সে ব্যক্তি উক্তরূপ করিবামাত্র উত্তরদিক হইতে একটি ঘূর্ণিবায়ু উঠিয়া আকবরী দরবারের তাবু, বিছানা, খাদ্যের বাসন-পত্র উলট-পালট করিয়া দিল এবং তাবুর স্তম্ভগুলি উঠিয়া তাহাদের মস্তকে আঘাত করিল লাগিল। অবশেষে, সম্রাটের মস্তকেও সাতটি কঠিন আঘাত লাগিল। যাহার ফলে কয়েকদিন পরই সম্রাট ইহজগত হইতে চিরতরে বিদায় গ্রহণ করিল। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় যে, মোহাম্মদি দরবারের মধ্যে উহার একটি ধূলিকণাও প্রবেশ করিল না। তাহারা শান্তির সহিত আহার সম্পন্ন করিয়া তথা হইতে প্রস্থান করিলেন। এই ঘটনা হযরত মোজাদ্দেদে আলফে সানী (রহঃ) -এর সমাজ সংস্কারের পঞ্চম বর্ষে ঘটিয়াছিল।
- মাকতুবাতে রব্বানী। লেখকঃ হযরত মোজাদ্দেদে আলফে সানী (রহঃ)। ১ম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ১১-১৩ । [কিতাবের প্রারম্ভের হযরত আলফে সানী (রহঃ)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী থেকে লেখাটি সংগৃহীত হয়েছে। ]
***
0 Comments:
Post a Comment