Saturday, January 27, 2018

// // Leave a Comment

যার নাই উস্তাদ, তার উস্তাদ শয়তান

সাধারণ লোকেরা কোরআন শরীফের বাংলা তরজমা নিজে নিজেই পড়ে থাকে। কোন উস্তাদের কাছে যায় না। ফলে, এই গভীর জ্ঞান-সাগর পাড়ি দেওয়ার কৌশল জানা না থাকার কারণে নানা রকম সন্দেহে পতিত হয়। আবার এই সন্দেহ দূর করার জন্যে কোন মোহাক্কেক আলেমকেও জিজ্ঞাসা করে না।
ফলে, সন্দেহ গভীর থেকে গভীরতর হয়ে একদিন ঈমান বরবাদ করে বসে। 
দেখুন, বাংলায় জ্যামিতির বই আছে। সেখানে জ্যামিতির চিত্রগুলি বাংলা ভাষায় নিজে নিজে পড়ে মানুষ কেন বুঝতে পারেনা? বলাবাহুল্য, সেখানে উস্তাদের দরকার হয়। উস্তাদ ছাড়া সেখানে ভুল করা অবশ্যম্ভাবী।
এমনকী মানব রচিত কবিতার ছন্দও নিজে নিজে পড়তে গিয়ে ভুল করে ফেলে।
-যেরূপ এক ব্যক্তি নিচের ছন্দটি ভুলভাবে পাঠ করে এর অর্থ এত ভুলভাবে গ্রহণ করেছিল যে, পরে তার বন্ধুর উপকার করতে গিয়ে তাকে মারাত্মক বিপদে ফেলেছিল। ছন্দটি এইরূপঃ
"সেই হলো বন্ধু, যে বিপদে পড়া বন্ধুর হাত ধরে।"
ছন্দটি পাঠ করার পর সে মনে মনে ভাবলো, এবার একটা চমৎকার কৌশল শিক্ষা করেছি।
একদিন সে দেখলো তার বন্ধু অন্য এক ব্যক্তির সাথে ভীষণভাবে মারামারি করছে। বন্ধু তার সাধ্যমত দুই হাতে মার ঠেকাচ্ছিল। এই ব্যক্তিটি বন্ধুর বিপদ দেখে দৌঁড়ে এসে তার দুই হাত ধরে রাখলো। ফলে, বন্ধু একটি মারও আর ঠেকাতে পারলো না। বিপক্ষ লোকটি ইচ্ছামত মার দিয়ে যখন চলে গেল, তখন সে হাত ছাড়লো!
বন্ধু জিজ্ঞাসা করলো, "কী বন্ধু, তুমি আমার বিপদের সময় হাত ধরে রাখলে যে?"
সে জওয়াব দিল, "কেন তুমি কি শেখ সাদীর এই কবিতাটি পড়নি?"
"সেই হলো বন্ধু, যে বিপদগ্রস্থ বন্ধুর হাত ধরে!"
ভাগ্য ভাল যে ফারসী 'দাসত্‌' শব্দের অর্থ 'হাত' ধরেছে, দাস্ত (পায়খানা) ধরে নিয়ে আসেনি।
সুতরাং, যারা কোরআন পাকের বাংলা তরজমা পড়ে নিজের বুঝ অনুযায়ী আমল করতে চায়, তারা এই মূর্খটির চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
***
***বুড়ির কান্ড***
এদের আরেকটি উদাহরণ হলো সেই বৃদ্ধার ন্যায় যার বাড়ীতে বাদশাহের পোষা বাজ উড়ে গিয়ে পড়েছিল।
বৃদ্ধা পাখীটি ধরে আফসোস করে বলতে লাগলো, ‘আহা! বাদশাহের বিলাসিতায় তোর এই দুর্দশা হয়েছে। খাঁচায় আটকিয়ে রেখেছিল এতদিন, নখগুলিও কেটে দেয়নি। কত বড় বড় নখ হয়েছে।‘
এই বলে সেই পাখির সব কয়টি নখ একেবারে গোড়া থেকে কেটে দিল।
এরপর, বাজের বাঁকা ঠোঁটটি দেখে বলে উঠলো, ‘আহা, খাঁচার মধ্যে অযত্নে থাকতে থাকতে ঠোঁটটি কেমন বাঁকা হয়ে পড়েছে। আয় তোর ঠোঁট সোজা করে দিই।‘
এই বলে ঠোঁটের বাঁকা অংশ ছুরি দিয়ে চেঁছে ঠোটটি সম্পূর্ণ সোজা করে দিল।
ফল হলো এই যে, বাজটি আর কোন দিন পায়ের নখের সাহায্যে ছোঁ মেরে শিকার ধরতে পারবে না এবং আর কোন দিন ঠোঁট দিয়ে ছিঁড়ে শিকারের গোশত খেতে পারবে না।
এই অবুঝ বৃদ্ধাটি বাজের উপকার করতে গিয়ে জীবনের মত তাকে পঙ্গু করে দিল।
সেইরূপ অনেকে কোরআন পাকের বাংলা তরজমা পাঠ করে এই অবুঝ বৃদ্ধার মত মূল বস্তুকে পরিবর্তন করে ভুলভাবে অর্থ গ্রহণ করে থাকে।
-আল ইফাযাতুল ইয়াওমিয়্যাহ্‌। [খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১০২-১০৩]

0 Comments:

Post a Comment