Monday, February 19, 2018

// // Leave a Comment

খলীফা মনছুর

হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে বাগদাদের খলীফা মনছুর হযরত জা’ফর ছাদেকের বিরাট ব্যক্তিত্ব এবং তাঁহার প্রতি জনসাধারণের অগাধ শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা দেখিয়া নিজের রাজত্ব সম্বন্ধে ভীত ও শঙ্কিত হইয়া পড়িলেন। তাই তিনি এক রাত্রে স্বীয় উযীরকে ডাকিয়া বলিলেন, ‘যাও, জা’ফর ছাদেককে ডাকিয়া আন, আমি তাহাকে হত্যা করিব। ’
উযীর বিনয় সহকারে বলিলেন, “বেচারা নিরীহ লোক, নির্জনে বসিয়া আল্লাহ তা’আলার এবাদত করিতেছেন। সংসারের সহিত তাঁহার কোন সম্পর্ক নাই। সমস্ত কিছুরই সম্পর্ক ছিন্ন করিয়া দিয়াছেন- এহেন ব্যক্তির প্রতি আপনার রাগান্বিত হওয়ার এবং তাঁহার হত্যা করিবার কারণ কী? আমি তো তাঁহার দ্বারা আপনার ক্ষতির কোনই আশংকা দেখিতেছি না। তাঁহাকে হত্যা করিয়া আপনার কী লাভ হইবে?” উযীরের এই কথায় বাদশাহর মনোভাবের কিছুমাত্র পরিবর্তন হইল না; বরং তিনি উযীরের প্রতি রাগান্বিত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “আমি তোমার এইসব নীতিকথা শুনিতে চাইনা। তাহাকে আমার দরবারে হাজির করিতে হইবে। ” উযীর পুনঃ পুনঃ অনুরোধ করিয়াও বাদশাহের মনোভাবের কোনই পরিবর্তন করিতে পারিলেন না, অগত্যা হযরত জাফর ছাদেক (রহঃ) –কে ডাকিয়া আনার জন্য গমন করিলেন। এদিকে খলীফা গোলামদিগকে বলিয়া রাখিলেন, “জা’ফর ছাদেককে দরবারে হাজির করা মাত্রই আমি আমার মাথার মুকুট নামাইয়া ফেলিব। আর, তোমরা আমার এই সংকেত পাওয়া মাত্রই তাহাকে হত্যা করিয়া ফেলিও। ” কিন্তু, আল্লাহ পাকের লীলা বুঝা মুশকিল। হযরত জা’ফর ছাদেক যখন দরবারে আসিয়া উপস্থিত হইলেন, তখন মনছুর তাঁহাকে হত্যা করিবেন তো দূরের কথা; তাঁহাকে দেখামাত্র সন্ত্রস্তভাবে সিংহাসন ছাড়িয়া তাঁহার এস্তেকবালের জন্য দ্রুত আসিয়া তাঁহার সম্মুখে নতজানু হইয়া পড়িলেন; এবং পরমুহূর্তেই তাঁহাকে অতি সম্মানের সহিত নিজের সিংহাসনে নিয়া বসাইলেন; গোলামেরা তো এই দৃশ্য দেখিয়া বিস্ময়ে অবাক হইয়া রহিল। এদিকে মনছুর হযরত ছাদেককে বলিলেন, ‘আমার নিকট আপনার কোন প্রয়োজন থাকিলে বলুন, এই মুহূর্তেই আমি তাহা পূরণ করিব। ” হযরত ইমাম জাফর ছাদেক (রহঃ) বলিলেন, “আপনার নিকট আমার কোন জিনিসেরই প্রয়োজন নাই। শুধু আপনার নিকট আমার একটি মাত্র অনুরোধ আপনি আমাকে আর কখনও ডাকাইয়া আমার এবাদতে বিঘ্ন ঘটাইবেন না। ” শুনিয়া খলীফা মনছুর তৎক্ষনাৎ তাঁহাকে খুব সম্মানের সহিত বিদায় দিলেন। হযরত জা’ফর ছাদেক (রহঃ) –কে বিদায় করার পর মুহূর্তেই মনছুরের সর্ব শরীরে কম্পন আরম্ভ হইল। তিনি কাঁপিতে কাঁপিতে সংজ্ঞাহীন হইয়া পড়িলেন। এই জ্ঞানহীন অবস্থার মধ্যেই তাহার তিনদিন কাটিয়া গেল। কেহ কেহ বলিয়াছেন- এই বেহঁশী অবস্থা এতক্ষণ স্থায়ী হইয়াছিল যে, তদবস্থায় তাঁহার তিন ওয়াক্তের নামাজ কাযা হইয়াছিল। জ্ঞান ফিরিয়া আসার পর উযীর যখন খলীফাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘আপনার এমন অবস্থা হইল কেন?’ খলীফা বলিলেন, ‘হযরত জা’ফর ছাদেক (রহঃ) আমার দরবারে প্রবেশ করিলে আমি দেখিলে পাইলাম তাঁহার সঙ্গে একটি বিরাটকায় অজগর এমন বিকটভাবে হাঁ করিয়া রহিয়াছে যে, তাহার একটি চোয়াল চত্তরের নিম্নে আর অপরটি উর্দ্ধে। অজগরটি তাহার অবস্থার ভাষায় আমাকে বলিল, “মনছুর, সাবধান! যদি তুমি জা’ফর ছাদেকের একটি কেশও স্পর্শ কর অথবা কোন রকম কষ্ট দাও, তবে তোমাকে এখনই এই চত্তরসহ গিলিয়া ফেলিব। ” অজগরের ভয়ে আমি এমন জ্ঞানহারা হইয়া পড়িয়াছিলাম- আমি কী বলিয়াছি বুঝিতে পারি নাই। তবে এতটুকু স্মরণ আছে যে, আমি জা’ফর ছাদেকের খেদমতে ওজর-আপত্তি পেশ করিয়া বিনয় ও নম্রতার সহিত তাঁহাকে সসম্মানে বিদায় করিয়াছি; এবং পরক্ষণেই সম্পূর্ণরূপে সংজ্ঞাহীন হইয়া পড়িয়াছি। 
- তাযকেরাতুল আওলিয়া। [১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২]
***

0 Comments:

Post a Comment