এক ব্যক্তির এক ছেলে ছিল। ছেলেটি ছিল বোকা। সেজন্যে পিতার ভাবনার অন্ত ছিল না।
মৃত্যুর সময় পিতা ছেলেকে ডেকে বললো, “আমার মৃত্যুর পর যারা শোক প্রকাশের জন্যে আসবে তাদের সঙ্গে নরম এবং মিষ্টি কথা বলিও।
উঁচা জায়গায় বসায়ো এবং মোটা কাপড় পরে তাদের সঙ্গে দেখা করিও। আর, মূল্যবান খাবার খেতে দিও। ”
পিতা ভাবলেন, ছেলে যদি এই ওছিয়ত মত চলে তবে কিছুটা সামাজিকতা রক্ষা করতে শিখবে এবং ধীরে ধীরে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।
পিতা মারা গেলেন।
মৃত্যুর পর পিতার এক বন্ধু শোক প্রকাশ করতে এসে দরজায় কলিং বেল টিপেছে। চাকর দরজা খুলে সোফায় বসতে দেয়।
ছেলেটি বললো, “এখানে নয়। ঘরের ছাদে পানির ট্যাঙ্ক আছে সেখানে বসতে দাও। ”
সুতরাং, বেচারা মেহমানকে টেনে-হেঁচরিয়ে নিয়ে উঁচুতে পানির ট্যাঙ্কের উপর বসানো হলো।
অতঃপর, ছেলেটি কার্পেট পরলো এবং গায়ে জাজিম জড়িয়ে মেহমানের সঙ্গে দেখা করতে গেল।
মেহমানটি গদ গদ কন্ঠে তার বন্ধুর কথা জিজ্ঞাসা করতে লাগলো, “তোমার আব্বার কী অসুখ হয়েছিল?”
ছেলেটি বললো, “তুলা। ”
মেহমান আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “তিনি কবে মারা গেছেন?”
ছেলেটি বললো, “গুড়। ”
বেচারা মেহমান কয়েকবার প্রশ্ন করে যখন ‘তুলা’ আর ‘গুড়’ ছাড়া আর কোন জওয়াব পেলেন না তখন চুপ হয়ে গেলেন।
কিছুক্ষণ পর চাকরকে হুকুম করা হলো, “মেহমানকে পানির ট্যাঙ্ক থেকে নিচে নামাও। ”
সুতরাং, নিচে নামানো হলো এবং খাবার পরিবেশন করা হলো। মেহমান গোশত মুখে দিয়ে যখন ছিঁড়তে পারলেন না তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলে ফেললেন, “গোশত সিদ্ধ হয়নি। ”
ছেলেটি বললো, “বলেন কী? আমি আপনার জন্যে পাঁচ হাজার টাকা দামের কুকুর কেটেছি অথচ আপনার পছন্দ হলো না?”
লোকটি এবার ব্যাকুল হয়ে উঠলো। ছেলেটির কীর্তিকলাপের কারণ জিজ্ঞাসা করায় ছেলে বললো, “আব্বা আমাকে ওছিয়ত করেছেন যে, উনার মৃত্যুর পর তাঁর যে সকল বন্ধু-বান্ধব আসবেন তাদেরকে যেন উঁচা জায়গায় বসাই, মোটা কাপড় পরে তাদের সামনে যাই, নরম ও মিষ্টি কথা বলি এবং দামী খাদ্য খাওয়াই।
সুতরাং, ছাদের উপর যে পানির ট্যাঙ্ক আছে তার চেয়ে উঁচু জায়গা আর আমার বাড়িতে নাই। তাই আপনাকে সেখানেই বসাতে হয়েছে। আর, এই যে পোশাক আমার গায়ে দেখতে পাচ্ছেন তার চেয়ে মোটা কোন পোশাক আমার নাই। তাই এই কার্পেট এবং জাজিম পরে আপনার সঙ্গে দেখা করেছি। আপনার সঙ্গে নরম কথা বলার হুকুম ছিল। তাই দেখলাম তুলার চেয়ে নরম আর কিছু হয় না। আপনার প্রশ্নের জওয়াবে তাই ‘তুলা’ বলেছি। গুড়ের চেয়ে মিষ্টি আর কিছু হয় না। তাই ‘গুড়’ বলে আপনার কথার জওয়াব দিয়েছি। অতঃপর, আমার বাড়িতে অ্যালসেশিয়ান কুকুরটি ছাড়া অধিক মূল্যবান আর কোন জন্তু ছিল না। তাই সেই কুকুরটি আপনার জন্যে কেটে দিয়েছি। ”
বেচারা মেহমান এই কথা শুনে আর কাল বিলম্ব না করে সেখান থেকে পালালেন।
ছেলেটির বাপ ওছিয়ত করেছিল কি এই উদ্দেশ্যে যে, মেহমানকে বিরক্ত করা হউক? খেদমতের নামে মেহমানকে বিরক্ত করা কখনও ‘খেদমত’ হতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে খেদমত সম্পর্কে কয়েকটি ধারণা নিম্নরূপঃ
খেদমতের সংজ্ঞাঃ
মখদুমের সুবিধার দিকে লক্ষ্য রাখাই হলো খেদমত। রুচিগত কারণে না খাইয়ে যদি মেহমানের আরাম হয় তবে না খাওয়ানোটাই খেদমত। অনুরূপভাবে কোন কাজ না করে দিয়ে যদি মখদুমের অধিক আরাম হয় তবে সেক্ষেত্রে কাজটি না করাই খেদমত। ডায়াবেটিস রোগীর হাত থেকে চিনির পেয়ালা কেড়ে নেওয়া একটি উত্তম খেদমত। আর, ব্লাড প্রেসারের রোগীকে তার নিষেধ সত্ত্বেও অধিক খাদ্য খেতে বাধ্য করা একটি বড় বেয়াদবী।
জুতা কেড়ে নেওয়ার ঘটনাঃ
এক বুজুর্গ মসজিদ থেকে জুতা হাতে বাহিরে যাচ্ছেন। এক ভক্ত এসে হাত থেকে জুতা নিয়ে এগিয়ে দিতে গেল। কিন্তু, তিনি জুতা না দেওয়ায় লোকটি বুজুর্গের সামনে এসে রাস্তা আটকালো এবং জুতা ধরে টানাটানি করতে লাগলো। শেষে বুজুর্গের ঘাড়ের কাছে এক হাতে চাপ দিয়ে আরেক হাতে হেঁচকা টান মেরে জুতা কেড়ে নিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে আঙিনার বাহিরে রেখে দিল এবং বিজয়ের হাসি হাসতে লাগলো। বুজুর্গ বেচারা ঘাড়ে এবং হাতে ব্যথা পেলেন, আর রোদে উত্তপ্ত আঙিনায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলেন। কিন্তু, লোকটি তবুও জুতা এগিয়ে দেওয়াকেই খেদমত মনে করেছে।
বৃটেনের রানীর মেহমানদারীঃ
বৃটেনের রানী একবার ইরানের শাহকে দাওয়াত করেছিলেন। আহারের পর সুগন্ধ গোলানো সাবান একটি সুন্দর পেয়ালায় করে সবার সামনে রাখা হলো হাত ধোয়ার জন্যে। ইরানের শাহ পেয়ালাটি উঠালেন এবং খাদ্যবস্তু ভেবে পেয়ালা পান করে নিলেন। অনুষ্ঠানের সকল মেহমান শাহের প্রতি অপূর্ব সম্মান দেখালেন। প্রত্যেকে সামনে রাখা নিজ নিজ সাবান গোলানো পেয়ালা পান করে নিলেন।
একেই বলে ভদ্রতা। একেই বলে মেহমানদারী। মেহমান যেন একটুও লজ্জ্বা না পান সেদিকে কতটা সতর্ক দৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ্!
-আল ইফাযাতুল ইয়াওমিয়্যাহ্। [খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৮২।]
মৃত্যুর সময় পিতা ছেলেকে ডেকে বললো, “আমার মৃত্যুর পর যারা শোক প্রকাশের জন্যে আসবে তাদের সঙ্গে নরম এবং মিষ্টি কথা বলিও।
উঁচা জায়গায় বসায়ো এবং মোটা কাপড় পরে তাদের সঙ্গে দেখা করিও। আর, মূল্যবান খাবার খেতে দিও। ”
পিতা ভাবলেন, ছেলে যদি এই ওছিয়ত মত চলে তবে কিছুটা সামাজিকতা রক্ষা করতে শিখবে এবং ধীরে ধীরে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।
পিতা মারা গেলেন।
মৃত্যুর পর পিতার এক বন্ধু শোক প্রকাশ করতে এসে দরজায় কলিং বেল টিপেছে। চাকর দরজা খুলে সোফায় বসতে দেয়।
ছেলেটি বললো, “এখানে নয়। ঘরের ছাদে পানির ট্যাঙ্ক আছে সেখানে বসতে দাও। ”
সুতরাং, বেচারা মেহমানকে টেনে-হেঁচরিয়ে নিয়ে উঁচুতে পানির ট্যাঙ্কের উপর বসানো হলো।
অতঃপর, ছেলেটি কার্পেট পরলো এবং গায়ে জাজিম জড়িয়ে মেহমানের সঙ্গে দেখা করতে গেল।
মেহমানটি গদ গদ কন্ঠে তার বন্ধুর কথা জিজ্ঞাসা করতে লাগলো, “তোমার আব্বার কী অসুখ হয়েছিল?”
ছেলেটি বললো, “তুলা। ”
মেহমান আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “তিনি কবে মারা গেছেন?”
ছেলেটি বললো, “গুড়। ”
বেচারা মেহমান কয়েকবার প্রশ্ন করে যখন ‘তুলা’ আর ‘গুড়’ ছাড়া আর কোন জওয়াব পেলেন না তখন চুপ হয়ে গেলেন।
কিছুক্ষণ পর চাকরকে হুকুম করা হলো, “মেহমানকে পানির ট্যাঙ্ক থেকে নিচে নামাও। ”
সুতরাং, নিচে নামানো হলো এবং খাবার পরিবেশন করা হলো। মেহমান গোশত মুখে দিয়ে যখন ছিঁড়তে পারলেন না তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলে ফেললেন, “গোশত সিদ্ধ হয়নি। ”
ছেলেটি বললো, “বলেন কী? আমি আপনার জন্যে পাঁচ হাজার টাকা দামের কুকুর কেটেছি অথচ আপনার পছন্দ হলো না?”
লোকটি এবার ব্যাকুল হয়ে উঠলো। ছেলেটির কীর্তিকলাপের কারণ জিজ্ঞাসা করায় ছেলে বললো, “আব্বা আমাকে ওছিয়ত করেছেন যে, উনার মৃত্যুর পর তাঁর যে সকল বন্ধু-বান্ধব আসবেন তাদেরকে যেন উঁচা জায়গায় বসাই, মোটা কাপড় পরে তাদের সামনে যাই, নরম ও মিষ্টি কথা বলি এবং দামী খাদ্য খাওয়াই।
সুতরাং, ছাদের উপর যে পানির ট্যাঙ্ক আছে তার চেয়ে উঁচু জায়গা আর আমার বাড়িতে নাই। তাই আপনাকে সেখানেই বসাতে হয়েছে। আর, এই যে পোশাক আমার গায়ে দেখতে পাচ্ছেন তার চেয়ে মোটা কোন পোশাক আমার নাই। তাই এই কার্পেট এবং জাজিম পরে আপনার সঙ্গে দেখা করেছি। আপনার সঙ্গে নরম কথা বলার হুকুম ছিল। তাই দেখলাম তুলার চেয়ে নরম আর কিছু হয় না। আপনার প্রশ্নের জওয়াবে তাই ‘তুলা’ বলেছি। গুড়ের চেয়ে মিষ্টি আর কিছু হয় না। তাই ‘গুড়’ বলে আপনার কথার জওয়াব দিয়েছি। অতঃপর, আমার বাড়িতে অ্যালসেশিয়ান কুকুরটি ছাড়া অধিক মূল্যবান আর কোন জন্তু ছিল না। তাই সেই কুকুরটি আপনার জন্যে কেটে দিয়েছি। ”
বেচারা মেহমান এই কথা শুনে আর কাল বিলম্ব না করে সেখান থেকে পালালেন।
ছেলেটির বাপ ওছিয়ত করেছিল কি এই উদ্দেশ্যে যে, মেহমানকে বিরক্ত করা হউক? খেদমতের নামে মেহমানকে বিরক্ত করা কখনও ‘খেদমত’ হতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে খেদমত সম্পর্কে কয়েকটি ধারণা নিম্নরূপঃ
খেদমতের সংজ্ঞাঃ
মখদুমের সুবিধার দিকে লক্ষ্য রাখাই হলো খেদমত। রুচিগত কারণে না খাইয়ে যদি মেহমানের আরাম হয় তবে না খাওয়ানোটাই খেদমত। অনুরূপভাবে কোন কাজ না করে দিয়ে যদি মখদুমের অধিক আরাম হয় তবে সেক্ষেত্রে কাজটি না করাই খেদমত। ডায়াবেটিস রোগীর হাত থেকে চিনির পেয়ালা কেড়ে নেওয়া একটি উত্তম খেদমত। আর, ব্লাড প্রেসারের রোগীকে তার নিষেধ সত্ত্বেও অধিক খাদ্য খেতে বাধ্য করা একটি বড় বেয়াদবী।
জুতা কেড়ে নেওয়ার ঘটনাঃ
এক বুজুর্গ মসজিদ থেকে জুতা হাতে বাহিরে যাচ্ছেন। এক ভক্ত এসে হাত থেকে জুতা নিয়ে এগিয়ে দিতে গেল। কিন্তু, তিনি জুতা না দেওয়ায় লোকটি বুজুর্গের সামনে এসে রাস্তা আটকালো এবং জুতা ধরে টানাটানি করতে লাগলো। শেষে বুজুর্গের ঘাড়ের কাছে এক হাতে চাপ দিয়ে আরেক হাতে হেঁচকা টান মেরে জুতা কেড়ে নিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে আঙিনার বাহিরে রেখে দিল এবং বিজয়ের হাসি হাসতে লাগলো। বুজুর্গ বেচারা ঘাড়ে এবং হাতে ব্যথা পেলেন, আর রোদে উত্তপ্ত আঙিনায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলেন। কিন্তু, লোকটি তবুও জুতা এগিয়ে দেওয়াকেই খেদমত মনে করেছে।
বৃটেনের রানীর মেহমানদারীঃ
বৃটেনের রানী একবার ইরানের শাহকে দাওয়াত করেছিলেন। আহারের পর সুগন্ধ গোলানো সাবান একটি সুন্দর পেয়ালায় করে সবার সামনে রাখা হলো হাত ধোয়ার জন্যে। ইরানের শাহ পেয়ালাটি উঠালেন এবং খাদ্যবস্তু ভেবে পেয়ালা পান করে নিলেন। অনুষ্ঠানের সকল মেহমান শাহের প্রতি অপূর্ব সম্মান দেখালেন। প্রত্যেকে সামনে রাখা নিজ নিজ সাবান গোলানো পেয়ালা পান করে নিলেন।
একেই বলে ভদ্রতা। একেই বলে মেহমানদারী। মেহমান যেন একটুও লজ্জ্বা না পান সেদিকে কতটা সতর্ক দৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ্!
-আল ইফাযাতুল ইয়াওমিয়্যাহ্। [খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৮২।]
***
0 Comments:
Post a Comment