Tuesday, April 24, 2018

// // Leave a Comment

আল্লাহর ভয়

 বনী ইসরাঈল গোত্রে একজন আবেদ লোক ছিলেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে দরিদ্র অবস্থায় জীবন-যাপন করতেন। একদা জঠর জ্বালায় অস্থির হয়ে সন্তানদের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে তিনি স্ত্রীকে বাহিরে পাঠালেন।
স্ত্রী জনৈক ধনাঢ্য ব্যক্তির দ্বারস্থ হয়ে সন্তানদের জন্য কিছু প্রার্থনা করলে লোকটি বললো, - ‘অবশ্যই আমি তোমাকে কিছু দান করবো; কিন্তু, শর্ত হচ্ছে আমি কিছুক্ষণের জন্য তোমাকে ভোগ করতে চাই। ’ একথা শুনে স্ত্রীলোকটি নিশ্চুপভাবে গৃহে ফিরে আসলো। গৃহে এসে দেখে সন্তানরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় কান্নাকাটি করছে এবং মরণাপন্ন অবস্থায় উপনীত হয়েছে। মা’কে দেখে ওরা তার কাছে খাবারের জন্য আর্তি করতে লাগলো। স্ত্রীলোকটি সন্তানদের এহেন কষ্ট সহ্য করতে না পেরে পুনরায় সেই লোকটির দ্বারস্থ হয়ে প্রার্থনার পুনরাবৃত্তি করলো। স্ত্রীলোকটি প্রথমবারের বিপরীত এবার দেহ দানের জন্য রাজী হয়ে গেল। অতঃপর, ধনাঢ্য লোকটি স্বীয় মনোষ্কামনা পূরণের জন্য যখন উদ্যত হলো, তখন স্ত্রীলোকটির সর্বশরীর হঠাৎ এমনভাবে কাঁপতে আরম্ভ করলো যে, তার শরীরের জোড় গ্রন্থিসমূহ যেন উপড়ে যাবে। লোকটি জিজ্ঞেস করলো, - ‘তোমার এ অবস্থা হচ্ছে কেন?’ স্ত্রীলোকটি বললো, - ‘আমি মহান সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করি, ফলে আমার এ অবস্থা হয়েছে। ’ লোকটি বললো, - ‘তোমার এহেন ভূখা-ফাঁকা ও দারিদ্র্যবস্থায়ও আল্লাহর প্রতি তুমি এত প্রবল ভীতি ও শঙ্কা বোধ করছো। তা’হলে তো আমার পক্ষে আল্লাহকে আরও অধিক ভয় করা উচিত। ’ এ কথা বলে সে উক্ত গর্হিত কাজ হতে বিরত হয়ে গেল এবং স্বচ্ছ অন্তরে মহিলাকে তার প্রয়োজনের চাইতেও অধিক মাল-সম্পদ দিয়ে বিদায় করলো। মহিলা ঘরে ফিরে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে আনন্দচিত্তে সকলের জঠর-জ্বালা নিবারণ করলো। 
অতঃপর, মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা হযরত মূসা (আঃ) –এর নিকট এই মর্মে ওহী প্রেরণ করলেন যে, ‘হে মূসা! তুমি আমার সেই ধনাঢ্য বান্দাকে সুসংবাদ শুনিয়ে দাও যে, আমি তার সমস্ত গুনাহ্‌ মাফ করে দিয়েছি। ’ অতঃপর, হযরত মূসা (আঃ) সেই বান্দার নিকট গমন করে বললেন, - ‘তুমি এমন কী সৎকাজ করেছো? যার ফলে আল্লাহ্‌ তা’আলা তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তোমার সমস্ত গুনাহ্‌ মাফ করে দিয়েছেন?’ লোকটি হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে পূর্বাপর সম্পূর্ণ ঘটনা শুনালো। অতঃপর, হযরত মূসা (আঃ) তাকে ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত সুসংবাদটি শুনিয়ে বিদায় নিলেন। 
হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, -
মহামহিমান্বিত আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেনঃ
لا أجمع على عبدي خوفين و لا أمنين- من خافني في ألدنيا أمنته في ألاخرة و من أمنتي في ألدنيا أخفته يوم ألقيا مة-
‘আমি কখনও স্বীয় বান্দার মধ্যে দুইটি ভয় এবং দুইটি অভয় একত্রিত করি না। যে-বান্দা ইহজগতে আমার ভয়ে থাকবে, পরকালে আমি তাকে নির্ভয় রাখবো। আর, যে ব্যক্তি ইহলোকে আমা হতে নির্ভয় থাকবে, পরলোকে আমি তাকে ভীত-সন্ত্রস্ত রাখবো। ’
আল্লাহ্‌ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
فلا تخشوأ ألنس وأخشون-
‘তোমরা লোকদেরকে ভয় করো না; ভয় আমাকেই কর। ’
তিনি আরও ইরশাদ করেনঃ
‘তোমরা তাদেরকে ভয় করো না; ভয় আমাকেই কর, যদি তোমরা প্রকৃত ঈমানদার হয়ে থাক। ’ (আলি-ইমরানঃ ১৭৫)
-মুকাশাফাতুল ক্কুলুব। [ইমাম গাযযালী (রহঃ)] [খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২২]
***

0 Comments:

Post a Comment