Wednesday, December 13, 2017

// // Leave a Comment

গুরুর শিক্ষা

হযরত সুলতান নিজামুদ্দিন (রহঃ) এর যামানায় দিল্লীতে এক হিন্দু সাধু বাস করতেন। তিনি এমন এক অনুশীলন করেছিলেন যে রোগীর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে তার রোগ দূর হয়ে যেতো।


একবার হযরত নিজামুদ্দীন (রহঃ) এর অসুখ হলো। তিনি মাঝে মাঝে বেহুশ হয়ে পরতেন। হুশ হওয়ার পর খাদেমগণ আরজ করলেন যে যদি অনুমতিদান করেন তবে অমুক সাধুর কাছে হযরতের খাট কাঁধে করে উঠিয়ে নিয়ে যাবো। সে দৃষ্টির মাধ্যমে রোগ দূর করতে পারে।
হযরত বললেন, ‘সাবধান! এরূপ করিও না। তাহলে লোকদের আকীদা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
কিন্তু পীরের প্রতি মুরীদের মহব্বত হয়ে থাকে এশ্‌ক পর্যায়ের।হযরত যখন আবার বেহুশ হয়ে পরলেন তখন মুরিদগণ এত পেরেশান হলেন যে, হযরতের খাট উঠিয়ে সাধুর বাড়িতে হাজির করলেন এবং ভাবলেন এটা হযরতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হওয়ায় মাফ চেয়ে এর মীমাংসা করে নেওয়া যাবে।
সাধু দেখলেন এত বড় ব্যক্তিত্ব তার বাড়িতে এসে উঠেছে। তিনি তৎক্ষনাৎ সব কাজ ফেলে রেখে ছুটে গেলেন হযরতের খাটের কাছে এবং দৃষ্টি দিতেই এমনভাবে রোগ দূর হয়ে গেল যে হযরত একেবারে উঠে বসলেন। মনে হলো যেন কোন রোগই ছিলো না। তিনি দেখলেন যে, এটা সাধুর বাড়ি। বুঝতে পারলেন, এরা উনার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে উনাকে এখানে নিয়ে এসেছে। তাই কাউকে কিছু বললেন না।
বরং, তিনি সেই সাধুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার মধ্যে এই শক্তি কিসের প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে; কোন আমলের দ্বারা এই যোগ্যতা অর্জন করেছো, বল দেখি!’
 সাধু আরজ করলেন, “আমার মধ্যে শুধু একটি বস্তু আছে যা আমার গুরু আমাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। আর সেটা হলো এই যে, তিনি বলেছিলেন, ‘সব সময় নফসের বিরুদ্ধে চলিও; অর্থাৎ তোমার মন যে কাজটি করতে চায় সে কাজটি করিও না, আর যে কাজটি করতে চায়না সেই কাজটি করিও।’ এই একটি মাত্র অভ্যাসের দ্বারা আমার নফসের মধ্যে এমন এক শক্তি সৃষ্টি হয়েছে যার দ্বারা আমি ‘তাছার্‌রুফ’ করে রোগ দূর করে দিই।”
 এই কথা শুনে হযরত সুলতানজী জিজ্ঞাসা করলেন, “আচ্ছা, বল দেখি তোমার কি মুসলমান হতে মন চায়?”
 সাধু আরজ করলেন, ‘না, সেটা চায়না’।
 হযরত বললেন, “তাহলে তোমার গুরুর শিক্ষার উপর আমল হয় কই?”
সাধু চিন্তায় পড়ে গেল।
 এদিকে, হযরত উপকারের বদলে উপকারের চিন্তায় দোয়া করতে লাগলেন-‘হে আল্লাহ্‌, সে আমার উপকার করেছে, আমিও তার উপকার করতে চাই। সে আমার শরীরের রোগ দূর করেছে; আমি তার রূহানী রোগ-কুফুরী দূর করতে চাই। তুমি সাহায্য কর।’
সাধু আর ঠিক থাকতে পারলেন না, একটি ঘুর্ণিঝড় খেলে গেল তার অন্তরে। সে তৎক্ষণাৎ বলে উঠলোঃ
“লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্‌(সাঃ)”
 সুতরাং, উপকারের বদলে উপকার বাস্তবায়িত হলো। সাধু মুসলমান হয়ে ঈমানের সৌভাগ্য লাভ করলেন।
                      --আল এফাযাতুল ইয়াওমিয়্যাহ্‌।
                             (খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২০৩)

0 Comments:

Post a Comment