আসসালামু আলাইকুম!


***আমাদের সাইটে স্বাগতম!***


নির্বাচিত সাহিত্যিক এবং শিক্ষামূলক কনটেন্ট আপনারা এই সাইট থেকে পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন।

Sunday, October 26, 2025

// // Leave a Comment

মা'রিফাত

 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।'


মা'রিফাত।


'সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার জন্যে এবং অসংখ্য সালাত-সালাম দোজাহানের সরদার, সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নাবী ও রাসূল প্রিয় নাবীজী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার সম্মানিত পরিবার-পরিজন, অগ্রগণ্য সম্মানিত বংশধর এবং সম্মানিত সাহাবায়ে কেরামগণের উপর বর্ষিত হোক।

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা অজস্র রহমত আমাদেরকে সহ সকল মুসলমানদের দান করুন।'


'হক সুবহানুহু তা'আলার অস্তিত্ব, যাহা তাঁহার যাতের অনুরূপ বাসিতে হাকীকী (প্রকৃত অবিমিশ্র) এবং বিন্দুর মতো; তন্মধ্যে কোনরূপ ভাগ-বণ্টন হয় না। কিন্তু, অসংখ্য বিষয়ের সহিত সম্পর্ক রাখার কারণে উহা বিস্তৃত এবং প্রশস্ত বলিয়া মনে হয়।'

(মাআরিফে লাদুন্নিয়াঃ হযরত আহমাদ ফারুক সিরহিন্দ মুজাদ্দেদে আলফে সানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, পৃষ্ঠা ১৮)


[আকৃতির বিষয়টি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। যেমন, অনেক দূর থেকে বিশ্বজগতসমূহকে দেখলে বিন্দুর ন্যায় মনে হয় বা, তাত্ত্বিকভাবে অসীম বড় কোন কিছুকে সংকুচিত করে বিন্দু পর্যন্ত পৌঁছা যায়। - থিওরি অব জেনারেল রিলেটিভিটিঃ স্যার অ্যালবার্ট আইনস্টাইন।

যাইহোক, ঐ পবিত্র অসীম শক্তিশালী অদৃশ্য আলোর বিন্দু ছাড়া বাকী সবকিছুকেই- ঘূর্ণন, সংকোচন, প্রসারণ, রূপান্তরসহ বাইরের যাবতীয় বস্তু, শক্তি এবং প্রক্রিয়াকে কাল্পনিক বলা হয়েছে।

বিন্দু ছাড়া আরো বড় কোনো আকৃতি বা, সমস্ত জগৎসমূহ বা, অসীম স্থান বা, স্থান-কালের উর্ধ্বে হলেও তা দুই বা, ততোধিক বিন্দুর সমষ্টি; যা আসলে 'অপ্রকৃত বস্তুর' সমন্বয়।

আর, বিন্দু ছাড়া দুই বা, ততোধিক বিন্দুর সমষ্টি বা, এরূপ আকৃতির মধ্যে বিভাজন হয়, শরীক বা, অংশ সাব্যস্ত করা যায়; কিন্তু, বিন্দুর মধ্যে কোন শরীক বা, অংশ বা, ভাগ-বন্টণ হয় না; আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার অপরিবর্তনশীল স্থান-কালের উর্ধ্বের সেই বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুর ন্যায় সত্তাও অনুরূপ; উনি ছাড়া বাকী সবকিছুই ধারণা বা, কল্পনা মাত্র; কল্যানার্থে ভুল ধারণা সহযোগে- প্রবেশ, বের হওয়া বা, মিশ্রিত হওয়া ছাড়াই; যেগুলো উনার সত্তার সম্মুখে প্রকৃতপক্ষে অপ্রকৃত বস্তু। উনার পবিত্র যাতের মাঝেই মিশ্রণ বা, পরিবর্তন ছাড়া কল্পনা সংঘটিত হয়। কারণ, সত্তার মাঝেই ক্রিয়া ঘটে-যদিও তিনি তা থেকে পবিত্র। স্থান-কাল অসীমভাবে বিস্তৃত হয় কী করে? উত্তরে বলা যায়ঃ স্থান-কাল কাল্পনিক বিধায়- স্রষ্টার পবিত্র যাতের মাঝেই আছে- প্রকৃত অবিমিশ্রভাবে। সত্তার মাঝেই কল্পনা ক্রিয়া ঘটে- এ বিষয়টার ধারণা এখানে উল্লিখিত হয়েছে, আমাদের সচেতনতা শরীরের কিছু কোষের মধ্যে চলমান রাসায়নিক মিথষ্ক্রিয়া মাত্র- বিজ্ঞানের একথা থেকে এবং স্যার ইলন মাস্কের নিউরালিঙ্ক কর্তৃক মানব মস্তিষ্কে ইন্দ্রিয়সমূহের/স্বপ্নের নিয়ন্ত্রণ কোষস্থানে সংঘটিত পরিবর্তন সংক্রান্ত গবেষণা থেকে; ইউটিউবে এর উপর ভিডিও আছে; সেখান থেকে বিষয়টার ধারণা গৃহীত হয়েছে। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আছে, 'যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য।' (সূরা বাকারা, আয়াত ১৬৫)

তাই, কল্পনার উৎসও তিনি।

কোন কিছু থেকে আসতে বা, কোন কিছু হতে আরও বিন্দুর প্রয়োজন হবে; যা আদৌ নেই। কারণ, উনি কোন কিছু থেকে আসেননি এবং উনার থেকেও কেউ আসেনি; উনার কোন শরীক নেই ও উনি ছাড়া আর কোন প্রকৃত অস্তিত্ব নেই।

লা-মাকানকে এভাবে ভাবা যেতে পারে, ঐ পয়েন্টই শুধু বিদ্যমান; যদি সঞ্চারণের বা, স্থিরতার প্রয়োজন হয়, তবে কাল্পনিক স্পেস-টাইম তৈরি করে এর মাঝে বিচরণ বা, স্থিরতা অর্জিত হয়; অর্থাৎ, কল্পনায় বা, স্বপ্নে সফরের মতো।

আর, এই ড্রিম এক্সিস্টেন্সেই।- অ্যাবসোলুটলি আনমিক্সড।

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা গতি বা, স্থিতি থেকে পবিত্র।]


'লা শারীকা লাহূ'

'উনার কোন শরীক নেই।'

(সূরা আন'আমঃ আয়াত ১৬৩)


'আল্লাহু হা-দ্বিরী-।'

অর্থঃ 'আল্লাহ্‌ আমার নিকট বিদ্যমান আছেন।'


'আল্লাহু মা'য়ী-।'

অর্থঃ 'আল্লাহ্‌ আমার সঙ্গে আছেন।'

(আনিছুত্তালেবীনঃ ৫ম খন্ড, ৩৪৯ পৃষ্ঠা)


'দয়াময় (আল্লাহ্) আরশের উপর উঠেছেন।'

(সূরা ত্ব-হা-ঃ আয়াত ৫)


'আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।'

(সূরা ক্বফঃ আয়াত ১৬)


'তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাকো।'

(সূরা হাদীদঃ আয়াত ৪)


আর, 'আল্লাহ্‌ তা'আলা কোন স্থানে ও কালে আবদ্ধ নহেন, কোন দিকে নহেন, তাঁহার তূল্য কোন বস্তু নাই, তাঁহার পিতা, মাতা, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা নাই। তিনি এই সমস্ত কলঙ্কমূলক ছিফাত হইতে পবিত্র।'

(আনিছুত্তালেবীনঃ হযরত মাওলানা ওয়াল হাফিজ মোহাম্মদ আবদুর রহমান হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৬৪)


'খোদা তা'আলার বিশেষ স্থান হইল লা-মাকান।'

(আনিছুত্তালেবীনঃ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৭৭)


'আহলে সুন্নাহ্‌ ওয়াল্‌ জামা'আতের আলেমগণ কী সুন্দরই না বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা'আলার অজুদ, তাঁর 'যাত' সুব্‌হানুহু ওয়া তাআ'লার উপর অতিরিক্ত। অজুদকে প্রকৃত যাত বলা এবং অজুদের উপর অন্য কোন বিষয় স্থির না করা দৃষ্টির সংকীর্ণতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। শায়েখ আলাউদ্দৌলা বলেছেন, হক জাল্লা শানুহুর দুনিয়া অস্তিত্বের জগতেরও উর্ধ্বে, এই ফকীরকে যখন অস্তিত্বের জগতের উপর নেওয়া হয়, তখন হালের আধিক্যের মধ্যে থাকাবস্থায়ও আমি নিজেকে অনুসরণ জ্ঞানের দ্বারা মুসলিম হিসাবে গণ্য করতে থাকি। মোদ্দা কথা, সম্ভাব্যের ধারণায় যা কিছু আসে, তা সম্ভাবনা ব্যতীত আর কিছুই নয়।

...

বুলন্দ হিম্মতের জন্য এরকমই প্রয়োজন যে, হক তাআ'লার যাতের অন্বেষণকারী শেষ পর্যন্ত কিছুই পাবে না এবং তার কোনো নাম নিশানাও প্রকাশ পাবে না। একটি জামা'আত এমন আছে, যারা এর ভিন্ন অর্থ গ্রহণ করে। তাঁরা হক তাআ'লার যাতকে, স্বীয় অস্তিত্বের অনুরূপ মনে করে এবং তার সাথে সখ্যতা ও একাত্মতা সৃষ্টি করে।'

(মাবদা ওয়া মা'আদঃ মুজাদ্দেদে আলফে সানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি; মিনহা এগারো, পৃষ্ঠা ২৭, ২৮)


'স্বীয় মতলব অন্বেষী একদল লোক আছে, যাহারা আল্লাহ্‌ তা'আলাকে অবিকল 'নিজ' বলিয়া মনে করে* এবং তাঁহার সহিত নৈকট্য ও একত্বের সম্বন্ধ স্থাপন করে।'

(মকতুবাত শরীফঃ ১ম খন্ড, ১ম ভাগ, ১২৬ মকতুব, পৃষ্ঠা ২০৭)

(*অর্থাৎ, সৃষ্টিজগতসমূহের সবকিছু উনার কল্পনাস্বরূপ আরশে আযীমের উপরের সেই বিন্দুতে অবিমিশ্রভাবে একত্রিত।)


হযরত রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, 'আল্লাহ্‌ তা'আলা হযরত আদম (আলাইহিস সালাম)-কে তাঁর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।..'

(বুখারী ও মুসলিম শরীফ)


হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেন, 'আমি সর্বপ্রথম আমার সত্তার নূর দ্বারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের রূহ্‌ মুবারাক সৃজন করেছি।'

(সির্‌রুল আস্‌রারঃ বড়পীর হযরত আবদুল কাদির জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, পৃষ্ঠা ৪)


'আল্লাহর জন্যেই সর্বোৎকৃষ্ট তুলনা।'

(সূরা নাহলঃ আয়াত ৬০)


আর, উনার তুলনা উনি নিজেই। অন্য কোন কিছুই উনার সাথে তুলনীয় নয়।


'কোন কিছুই উনার সদৃশ নয়।'

 (সূরা শূরাঃ আয়াত ১১)


'আল্লাহ্‌ আসমান ও যমীনের আলো।'

 (সূরা নূর, আয়াত ৩৫)


মি'রাজ শরীফে নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার সাথে সাক্ষাত হয়েছিল। এ সম্পর্কে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'আমি নূর দেখেছি।' 

(সহীহ্‌ঃ মুসলিম শরীফঃ ৩৪১, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন)


অন্যত্র আছে, 'তিনি তো এক বিরাট জ্যোতি বা, আলো; অতএব, আমি তাকে কিভাবে দেখতে পারি?' 

(সহীহ্‌ঃ মুসলিম শরীফঃ ২৯১-(১৭৮), মুসনাদে আহমাদঃ ২১৪২৯, মুসনাদে বাযযারঃ ৩৯০৫, সহীহ্‌ ইবনু হিব্বানঃ ৫৮, আল মু'জামুল আওসাত্বঃ ৮৩০০, মিশকাতুল মাসাবীহঃ ৫৬৫৯)


নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

'তিনি (আল্লাহ্‌) নূর, আমি কি করে তা দৃষ্টির অধিগম্য করবো।'

(সহীহ্‌ঃ মুসলিম শরীফঃ ৩৪০, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন)


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-

'আমি আমার রবকে শ্মশ্রুহীন যুবকের আকৃতিতে দেখেছি।'

অর্থাৎ, মহান রবের নূর ও তাজাল্লী হৃদয় দর্পণে অবলোকন করেছি। [নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র হৃদয় দর্পণে আল্লাহর নূর প্রতিফলিত হয়েছে।] কারণ, ঐ আকৃতি হল রূহানী দর্পণ, যা জ্যোতি ও জ্যোতি-অবলোকনকারীর মধ্যে একটি মাধ্যম মাত্র। যখন আল্লাহ্ তা'আলা আকৃতি-প্রকৃতি, পানাহার ও অস্তিত্বের বৈশিষ্ট্যাবলী ও প্রভাব থেকে পূতঃপবিত্র। সুতরাং, তাঁর আকৃতি একটি দর্পণ মাত্র। (আর, এ 'দর্পণ' শব্দটিও শুধুমাত্র বুঝানোর জন্য; অন্যথায়, তিনি তা থেকেও অনেক অনেক উর্ধ্বে।) 'দর্পণ' ও 'দর্শক' উভয়টিই মহান আল্লাহর সত্তার সাথে সম্বন্ধহীন।

(সির্‌রুল আসরারঃ পৃষ্ঠা ৬৩)


'ক্বলব্‌ অর্থাৎ, দিল একটি আয়নার ন্যায়; উহাতে তাওহীদের পারা লাগাইলে আল্লাহ্‌ তা'আলার মহব্বত অর্জন ও কুদরাত দর্শন লাভে সক্ষম হইতে পারিবে।'

(আনিছুত্তালেবীনঃ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২০০)


'হজরত মুজাদ্দিদে আলফে সানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর জযবা ও সুলুক সম্পর্কেঃ 

জানা কর্তব্য যে, ইনায়েতে ইলাহী জাল্লা-সুলতানুহু সর্বপ্রথম আমাকে তাঁহার প্রতি আকর্ষিত করেন, যেমন- মুরাদের মাকামে উপনীত ব্যক্তিদেরকে আকর্ষিত করা হয়। অতঃপর, দ্বিতীয় পর্যায়ে, আমার জন্য এই জযবা, সুলুকের মঞ্জিল অতিক্রমণ সহজ করিয়া দেয়। বস্তুতঃ, প্রথমাবস্থায় আমি হক তা'আলার যাতকে, বস্তুর অনুরূপ প্রাপ্ত হই; যেমন- পরবর্তীকালের সুফিয়ায়ে কেরাম (তওহীদে-ওজুদীর মাকামে উপনীত ব্যক্তিগণ) এরশাদ করিয়াছেন। অতঃপর, আমি হক তা'আলাকে সমস্ত বস্তুর মধ্যে প্রাপ্ত হই, এমতাবস্থায় যে, তিনি উহাদের মধ্যে হলুল বা, প্রবেশ করেন নাই। পরে আমি হক তা'আলাকে মায়ীয়াতে যাতিয়া হিসাবে, সমস্ত বস্তুর সাথে অনুভব করি। অতঃপর, আমি হক তা'আলাকে সমস্ত বস্তুর পরে প্রাপ্ত হই। পরে সব বস্তুর প্রথমে পাই।


অতঃপর, আমি হক তা'আলা সুবহানুহুকে অবলোকন করি, আর সেখানে কোনকিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হয় নাই। ইহাই হইল তওহীদে শুহুদীর অর্থ- যাহাকে ফানা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। বেলায়েতের রাস্তায় ইহাই প্রথম পদক্ষেপের স্থান। আর, ইহাই হইলো কামালাতের সর্বশেষ স্তর, যাহা প্রথমে হাসিল হইয়া থাকে। আর, এই দর্শন, যাহা আলোচিত স্তরসমূহের যে কোন স্তরেই প্রকাশ পাইতে পারে, প্রথমে ইহা বহির্জগতে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে অন্তর্জগতে প্রকাশ পায়।


অতঃপর, আমি বাকার স্তরে উন্নীত হই, যাহা বেলায়েতের রাস্তায় দ্বিতীয় পদক্ষেপস্বরূপ। পরে আমি সমস্ত বস্তুকে দ্বিতীয়বার অবলোকন করি এবং আমি হক তা'আলা সুবহানুহুকে এই সমস্ত বস্তুর অনুরূপ প্রাপ্ত হই; বরং, আমার নিজের মতই পাই। অতঃপর, আমি আল্লাহ্‌ তা'আলাকে সমস্ত বস্তুর মধ্যে দেখি; বরং, স্বয়ং আমার নাফসের মধ্যে অবলোকন করি। পরে বস্তুর সাথে; বরং, আমার নিজের সাথেই দেখি; অতঃপর, বস্তুর প্রথমে; বরং, নিজেরও প্রথমে অবলোকন করি। পরে আমি হক তা'আলাকে বস্তুর পশ্চাতে দেখি; বরং, আমি আমাকে পরে অবলোকন করি। অতঃপর, আমি বস্তুই দেখিতে পাই এবং আল্লাহ্ তা'আলাকে আদৌ দেখিতে পাই নাই। আর, ইহাই ছিল সর্বশেষ পদক্ষেপ, যেখান হইতে প্রথম পদক্ষেপের দিকে প্রত্যাবর্তন করিতে হয়। আর, এই মাকাম হইল মাখলুককে হক সুবহানুহুর দিকে দাওয়াত দেওয়ার এবং আহবান করিবার জন্য পরিপূর্ণ মাকাম। আর, এই মঞ্জিলই পূর্ণরূপে হাসিল হয়। কেননা, পূর্ণ দরজার ফায়দা পৌঁছানো এবং ফায়দা হাসিল করিবার জন্য ইহাই প্রয়োজন। আর, ইহাই আল্লাহর ফযল; তিনি যাহাকে ইচ্ছা- ইহা প্রদান করেন। আর, আল্লাহ্ বড়ই ফযলওয়ালা। আর, আলোচিত সমস্ত অবস্থা এবং লিখিত সমস্ত কামালাত আমার হাসিল হয়। বরং, ইহা ঐ সমস্ত ব্যক্তিরই হাসিল হইয়া থাকে, যাঁহারা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও পরিপূর্ণ মানব হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তোফায়েলের সহিত সম্পৃক্ত। ইয়া আল্লাহ্! আমাদিগকে আপনার অনুসরণের উপর সুদৃঢ় রাখুন এবং আমাদের হাশর, আপনার-ই দলের সাথে করুন। (তাঁহাদের উপর সালাম ও শান্তি বর্ষিত হউক)। ইয়া আল্লাহ্‌! আপনি ঐ বান্দার প্রতি রহম করুন, যে আমার এই দোয়ার প্রতি আমীন বলে। তাঁহাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হউক- যাঁহারা হিদায়েতের অনুসরণ করেন।'

(মাআরিফে লাদুন্নিয়াঃ মারেফত আটত্রিশ, পৃষ্ঠা ৭৮,৭৯)


আর, 'আলো বস্তুকে দৃশ্যমান করে; কিন্তু, এটি নিজে অদৃশ্য। আমরা আলোকে দেখতে পাই না; কিন্তু, আলোকিত বস্তুকে দেখি।'

[আলোঃ উইকিপিডিয়া]


আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা সৃষ্ট আলোর যাবতীয় বৈশিষ্ট্য থেকে পবিত্র।


ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ্‌-এর 'আল ফিকহুল আকবারে' আছে, 'ওয়া হুয়া শাইউন।'


'মি'রাজের রাত্রিতে তাঁহার (প্রিয় নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) ইহজগতে আল্লাহ্‌ তা'আলার দর্শন লাভ হয় নাই ; বরং আখেরাত বা, পরজগতে ঘটিয়াছিল। কেননা, উক্ত রজনীতে তিনি স্থান-কালের বৃত্ত হইতে বহির্গত হইয়াছিলেন ও স্থানের সংকীর্ণতা ডিঙ্গাইয়া আজল বা, আদি ও আবাদ বা, অন্তকে একই মুহূর্তে প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। প্রারম্ভ ও শেষ একই বিন্দুতে সন্নিবিষ্ট দর্শন করিয়াছিলেন। যে বেহেশতবাসীগণ বহু সহস্র বৎসর পর বেহেশতে গমন করিবেন, তাঁহাদিগকে তথায় অবলোকন করিয়াছিলেন। আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু)- যিনি ফকীর ছাহাবীগণের পাঁচশত বৎসর পর বেহেশতে গমন করিবেন, তাঁহাকে দেখিলেন যে, উক্ত কাল অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি বেহেশতে প্রবেশ করিলেন। তখন তাঁহাকে উক্ত বিলম্বের কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। অতএব বুঝা গেল যে, উক্ত স্থানের অর্থাৎ, যে স্থানে গমন করতঃ হজরত নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্‌ তা'আলার দর্শন লাভ করিয়াছিলেন, সে স্থানের দর্শন পরকালের দর্শনের অন্তর্ভুক্ত। অতএব, আলেমগণের ইজমা বা, একতাবদ্ধ মতের বিপরীত হইল না। অর্থাৎ, পরজগত ব্যতীত যে, দর্শন লাভ হয় না, তাহার বিপরীত হইল না। এই দর্শনকে ভাবার্থে বা, বাহ্যিক হিসাবে পার্থিব দর্শন বলা যাইতে পারে। সমূদয় বিষয়ের প্রকৃত তত্ত্ব আল্লাহ্‌ তা'আলাই অবগত।'

(মকতুবাত শরীফঃ মুজাদ্দেদে আলফে সানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি; ১ম খন্ড, ৩য় ভাগ; ২৮৩ মকতুব, ১১৮ পৃষ্ঠা)


আর, মাওলানা মুহাম্মাদ জালালুদ্দিন রুমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেনঃ 'সমগ্র জগৎ একই সত্তা..।'

(তায্‌কেরাতুল আওলিয়াঃ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৫)


'তাওহিদে অজুদিঃ উহা এক খোদা তা'আলাকেই একমাত্র মাওজুদ (বিদ্যমান) মনে করা এবং সৃষ্ট পদার্থসমূহকে তাহারই জহুর (প্রকাশ) ব্যতীত আর কিছুই না বলিয়া মনে করা।'

(আনিছুত্তালেবীনঃ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৬৫)


'তৌহীদে-শুহুদী— এক-দর্শন, অর্থাৎ ছালেক বা, তরীকৎ পন্থীর দৃষ্টিতে এক-বস্তু ব্যতীত কিছুই থাকে না।'

(মকতুবাত শরীফঃ ১ম খন্ড, ১ম ভাগ; পৃষ্ঠা ৯০)


'লা মাওজুদা ইল্লাল্লাহ্‌।'

'আল্লাহ্‌ ব্যতীত কিছুই নাই।'

(আনিছুত্তালেবীনঃ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২২৪)


প্রিয়নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, 'আমি আল্লাহ্‌ থেকে, আর সকল ঈমানদার আমার থেকে।'

(হক্বী, তাফসীরে হক্বী, ৩/২১৭; সাখাভীঃ মাকাসিদুল হাসানাহ্‌, ১/৫৫ ; সির্‌রুল আস্‌রারঃ পৃষ্ঠা ৫)


'এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই যে, এই সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা হইলেন হক সুবহানাহু। আর, তিনিই উহাকে স্থিতিশীল রাখিয়াছেন। বস্তুতঃ চিরস্থায়ী ব্যাপারের সম্পর্ক হইলো, আখেরাতের অনন্ত শান্তি ও শাস্তির সহিত। যে সম্পর্কে সত্য সংবাদদাতা রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়াছেন। জাহেরী আলেমগণ এই সৃষ্টিজগতকে মওজুদে খারেজী (বাহিরে অবস্থিত) হিসাবে জানেন এবং আছারে খারেজী (বাহিরের প্রভাবের ফলশ্রুতি) বলিয়া মনে করেন। আর সুফিগণ আলমকে মাওহুম (কাল্পনিক) হিসাবে মনে করেন এবং ধারণা ও অনুভূতি ব্যতিরেকে ইহাকে জানার কোন পন্থা নাই বলিয়া অনুমান করেন। সে কল্পনা এইরূপ নহে যে, উহা কেবলমাত্র ধারণার দ্বারাই সৃষ্টি হইয়াছে। যাহার ফলে ধারণা শেষ হওয়ার সাথে সাথে উহারও পরিসমাপ্তি ঘটিবে। আসল ব্যাপার আদৌ এইরূপ নয়। বরং, মহান রব্বুল 'আলামীনের সৃষ্টির কারণ খুবই মজবুত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ধারণার মধ্যে স্থিতিশীলতা পয়দা করিয়াছেন, যাহার ফলে উহা মওজুদের (স্থিতিশীল থাকার) হুকুম এখতিয়ার (গ্রহণ) করিয়াছে। সমস্ত বুজর্গদের অভিমত এই যে, খারিজের (বাহিরের) মধ্যে কেবল হক সুবহানাহু তা'আলা মওজুদ (অবশিষ্ট) আছেন। আর, আলমের স্থিতিশীল হওয়ার ধারণা কেবলমাত্র জ্ঞানের দ্বারাই এবং বাহিরে উহার স্থিতি কল্পনাপ্রসূত বৈ আর কিছুই নয়।

আল্লাহ্‌ রবুল 'আলামীনের বাণী- আল্লাহর জন্য বুলন্দ (সুউচ্চ) মেছাল (সদৃশ, উদাহরণ) আছে। মওজুদে হাকিকী (মহান আল্লাহর প্রকৃত অবস্থান) জাল্লা শানুহু এবং মওহুমে-খারেজীর (কল্পনায় কোন কিছুর অবস্থান সম্পর্কে ধারণা করা) উদাহরণ হইল নকতায়ে জাওওয়ালার (সঞ্চারিত বিন্দুর) ন্যায়। আর, এই বিন্দুটি দ্রুতগতিতে ঘূর্ণনের কারণে যে বৃত্তটির সৃষ্টি হয়, এই কল্পিত বৃত্তটি ধারণার মধ্যে স্থিতি সৃষ্টি করে। অবশ্য প্রকৃতপ্রস্তাবে বৃত্তটির ধারণা কল্পনাপ্রসূত মাত্র। অন্যথায়, কেবল ঐ বিন্দুটিই মওজুদ।


মাশুকের গোপন ভেদ-এমন মেছাল

যেন উহা অন্যকিছু- অপরের হাল।


বস্তুতঃ আলম (সৃষ্টিজগত) হইলো অপ্রকৃত বস্তুর সমন্বয় মাত্র, তন্মধ্যে প্রকৃত স্থিতিশীল বস্তুর কোন সম্পর্ক নাই। আর, উহার সম্পর্ক হইল জাতে মওহুবের (নিছক জাত আল্লাহ্‌ তা'আলা) সহিত। পূর্ণ আরিফ (আল্লাহর পরিচয় লাভকারী) এই মারেফাতই (আল্লাহ্‌ পরিচিতি) পেশ করেন এবং উহাকে পূর্বশর্ত হিসাবে স্থাপন করেন। আর, এই জাতে মওহুবের বেঁ-চুনী হইতে কোন অংশ লাভ হইবে না। যেমন এ সম্পর্কে আলোচনা অন্য মকতুবে করা হইয়াছে। আর, যখন বেঁ-চুনরি সহিত সম্পর্ক স্থাপন করে; জ্ঞান ও দর্শনের বাহিরে যায় এবং বুদ্ধি ও ধারণার বহির্ভূত কাজ করে; তখন শুভবুদ্ধি যতই চেষ্টা করুক না কেন, কিছুই লাভ করিতে সক্ষম হয় না। বরং, যত দ্রুতই সে ধাবিত হইয়া যত দূরেই যাক না কেনো, কোন কিছুরই সে সন্ধান পাইবে না। কেবল পাইবে ছুম্মাল অরা, আল-অরা (পরে আরও পরে)। জওহরীয়াত (দূরে আরও দূরে- অভিষ্ট বস্তু) ও ইমকান (সম্ভাব্য) হওয়া সত্ত্বেও, তন্মধ্যে ঐ হুকুম অবশিষ্ট নাই। উহা নিস্তীর (অস্তিত্বহীনতা, শূন্যতা) হুকুম ব্যতীত অন্য কোন হুকুম কবুল করে না।'

(মুকাশিফাতে আয়নিয়াঃ হযরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মুকাশিফা - উনত্রিশ, পৃষ্ঠা ৬৩, ৬৪)


'বস্তুতঃ ঐ সমস্ত দৃশ্যমান বস্তু, যাহার আকৃতি প্রকাশ্যে অস্তিত্ববান আছে, ইহা কেবলমাত্র একটি ধারণা বৈ কিছুই নয় এবং উহা একটি ভুল ধারণা। যেমন, কাশফের অধিকারী ব্যক্তিদের দর্শন ক্ষমতা সাক্ষ্য প্রদান করে।'

(মাআরিফে লাদুন্নিয়াঃ পৃষ্ঠা ১৪)


'ঐ যাত অতি পবিত্র, যিনি স্বীয় যাত, সিফাত এবং আসমার দ্বারা সৃষ্টিজগতের নশ্বরতা সত্ত্বেও কোনরূপ পরিবর্তনকে কবুল করেন না।'


'আর ঐ কেন্দ্রবিন্দু, যাহা হইতে সমস্ত রেখার উৎপত্তি ঘটে এবং বৃত্তের শেষ প্রান্তের দিকে (অসীমে) সম্প্রসারিত হয়; উহা স্বীয় যাতের মধ্যে আধিক্যতাকে কবুল করে না।'

(মাআরিফে লাদুন্নিয়াঃ পৃষ্ঠা ১৯)


'বলুন! (হাবীব, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি আল্লাহ্‌ এক। আল্লাহ্‌ অমুখাপেক্ষী। তিনি কোন কিছু হতে আসেননি এবং উনার থেকেও কোন কিছু আসেনি। এবং উনার সমতূল্য কিছুই নেই।'

(সূরা ইখলাস)


প্রকৃত সত্য আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ও প্রিয় নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানেন।


Image from: Pixabay.

Read More

Thursday, October 27, 2022

// // Leave a Comment

প্রত্যাবর্তন


হযরত আবদুর রহমান হানাফী (রহঃ) যখন আরব সফরে ছিলেন তখন ফরিদপুরের এক লোক জাহাজ যোগে হজ্জ্ব সম্পাদনের জন্য মক্কা শরীফ যান।

হজ্জ্বের পর উনার বাড়ি ফেরার তারিখ তিনি ভুলে গিয়ে নির্দিষ্ট তারিখে স্টীমার ঘাটে আসতে পারেননি। ফলে জাহাজ ছেড়ে চলে যায়। পরে হঠাৎ মনে পড়ায় লোকটি জিদ্দা গিয়ে এরপর আবার মক্কা শরীফ ফিরে পাগলপারা হয়ে ঘুরতে থাকেন। তখন হারাম শরীফে একজন বাঙ্গালীর সাথে উনার সব ঘটনা খুলে বলেন। ঐ ব্যক্তি তাকে বলেন যে, মেছফালাহ-তে একজন বাঙ্গালী কামেল অলী আছেন, উনার নিকটে গিয়ে বলে দেখো- কোনো ব্যবস্থা হয় কিনা।

ঠিকানামত ফরিদপুরের লোকটি গিয়ে দেখেন সোনাকান্দার পীর আবদুর রহমান হানাফী (রহঃ) মোরাকাবায় বসে আছেন। দীর্ঘ সময় বসার পর তিনি চলে আসেন। এভাবে তিনদিন পীর সাহেবকে এ অবস্থায় পান এবং তৃতীয় দিন দীর্ঘসময় অপেক্ষা করার পর পীর সাহেব হুজরা থেকে বের হলে লোকটি প্রাণ খুলে সব কথা বলেন। হুজুর তাকে বললেন, তুমি এ বছর আমার সঙ্গে থাকো; থাকা ও খাবার পয়সা কিছুই লাগবে না। আগামী বছর হজ্জ্ব করে দেশে যাবার সব ব্যবস্থা ইনশাআল্লাহ্‌ আমি করে দেব। এতে লোকটি কিছুতেই রাজি হলো না বরং বাড়ি যাবার জন্যে কান্নাকাটি শুরু করে দিল; কেননা বাড়িতে ছোট-ছেলে মেয়ে, স্ত্রী ও মা রয়েছেন। তাঁদের দেখাশোনা ও লালন-পালনের আর কেউ নেই।

এরপর পীর আবদুর রহমান হানাফী (রহঃ) লোকটি কে বললেন, আমার রুমে মোমবাতি আছে, অন্ধকার ঘরে বসে আলাপ করতে কেমন লাগে; নাও, এ মোমবাতিটি জ্বালিয়ে নিয়ে এসো। আমার কাছে দিয়াশলাই নেই, লোকটি বললো, হুজুর আগুন কোথায় পাবো? পীর সাহেব হুজুর বললেন, দেখোতো, ঐ দূরে কে যেন একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। লোকটি দেখে বললো, হ্যাঁ, তাইতো। তখন লোকটি হুজুরের হাত থেকে খালি মোমবাতিটি নিয়ে জ্বালানোর জন্যে দ্রুত ঐ মোমবাতিওয়ালার পিছনে দৌঁড়াতে লাগলো। কিন্তু যত দ্রুত দৌঁড়ায় কোন অবস্থায়ই বাতিটির কাছে পৌঁছাতে পারেনা।

এভাবে বাতিটির পিছনে পিছনে দ্রুত দৌঁড়াতে থাকে আর বাতিটিও পিছাতে থাকে; হঠাৎ ঐ ব্যক্তি দেখে সামনের বাতিটি নিভে গেছে। সেও বেঁহুশ হয়ে পড়ে যায়। এমন সময় ঐ হাজী সাহেবের মা চিৎকার করে বলতে থাকেন যে, তোমরা কে কোথায় আছো- জলদি এসো, আমার ছেলেতো মক্কা শরীফ হতে বাড়িতে চলে এসেছে। সবাই এসে আশ্চর্যান্বিত হয়ে ব্যাপার জিজ্ঞেস করলে লোকটি ঘটনাটি সবাইকে খুলে বলেন।

- সোনাকান্দার মাটি। (পৃষ্ঠাঃ ৮৪-৮৫) লেখকঃ মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান।

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা উনার ওলীদের মতো আমাদেরকেও প্রিয়পাত্র করে নিন। আমীন।

***
Image Courtesy: https://pixabay.com/photos/way-sign-travel-landscape-nature-1767419/  


Read More

Thursday, February 20, 2020

// // 2 comments

অণুপ্রেরণায় পবিত্র কোরআন শরীফের ১০ আয়াত


 জীবনে অনেক সময় আমরা নানা কারণে হতাশ হই।তখন উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। নিজেকে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ মনে হয় তখন।

ওই মুহূর্তে আমরা এমন আশ্রয় খুঁজি, যার কাছে আমরা পেতে পারি সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা।
Read More

Sunday, January 26, 2020

// // Leave a Comment

পরীক্ষা

 একদা শেখ আবু সাঈদ মাইখারানী (রহঃ) হযরত বায়েযীদ (রহঃ) কে পরীক্ষা করার জন্য তাহার নিকটে গেলেন। হযরত বায়েযীদ (রহঃ) তাহা বুঝিতে পারিয়া তাহাকে বলিলেন, “হে আবু সাঈদ, রাঈ' নামক মুরীদের নিকট গমন কর। আমি কারামত ও বেলায়েত তাহার হাতে সোপর্দ করিয়া দিয়াছি। আবু সাঈদ মাইখারানী আবু সাঈদ রাঈর বাসস্থানে যাইয়া দেখিলেন, তিনি মাঠে এক জায়গায় নামাজ পড়িতেছেন এবং তাঁহার বকরীগুলোকে নেকড়ে বাঘেরা পাহারা দিতেছে। আবু সাঈদ রাঈ (রহঃ) নামাজ হইতে অবসর গ্রহণ করিয়া মাইখারানী (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি কী চান?” তিনি উত্তর করিলেন, “গরম রুটি এবং তাজা আঙ্গুর। " হযরত আবু সাঈদ রাঈ (রহঃ) নিজের হাতের লাঠিটি দ্বিখন্ডিত করিয়া এক খন্ড মাইখারানীর সম্মুখে মাটিতে পুতিয়া দিলেন, অপর খন্ডটি নিজের সম্মুখে পুতিলেন। তৎক্ষণাৎ লাঠির উভয় অংশ সবুজ এবং সতেজ বৃক্ষের রূপ ধারণ করিয়া মাইখারানীর সম্মুখস্থ খন্ডে কাল এবং আবু সাঈদ রাঈ'র সম্মুখের খন্ডে সাদা আঙ্গুর ফল ধরিল। মাইখারানী (রহঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমার অংশে কাল এবং আপনার অংশে সাদা আঙ্গুর ধরার কারণ কী?” আবু সাঈদ রাঈ (রহঃ) বলিলেন, “যেহেতু আমি খাঁটি নিয়্যতে বিশ্বাসের সহিত চাহিয়াছি। আর, আপনি পরীক্ষার নিয়্যতে চাহিয়াছেন; সুতরাং ইহা অবধারিত সত্য যে, প্রত্যেক বস্তুর বর্ণ উহার অবস্থার অনুরূপ হইয়া থাকে। " অতঃপর তিনি আবু সাঈদ মাইখারানীকে এক খানা কম্বল দিয়া বলিলেন, “ইহা খুবই হেফাযতে রাখিবেন যেন হারাইয়া না যায়। আবু সাঈদ মাইখারানী হজ্জ্বে গমন করিলে আরাফাতের ময়দানে কম্বলখানি তাহার নিকট হইতে গায়েব হইয়া যায়। বস্তামে প্রত্যাগমন করিয়া ঠিক সেই কম্বলখানিই আবু সাঈদ রাঈ' (রহঃ) এর নিকট দেখিতে পান!
- তাযকেরাতুল আওলিয়া। (১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৮৯)

Image by bess.hamiti@gmail.com from Pixabay ***
Read More
// // 1 comment

অভিমানী তোতা


 এক আতর বিক্রেতার একটি তোতা পাখি ছিল। পাখিটি সুমধুর সুরে আওয়াজ দিতে পারিত। আতর বিক্রেতা তোতাকে দেখাশোনার জন্য রাখিত। ঐ তোতা মানুষের ন্যায় খরিদ্দারদের সাথে কথা-বার্তা বলিতে জানিত।

Read More
// // Leave a Comment

হযরত ওয়াইস্ ক্করণী (রহঃ) এর নসীহত


 হযরত ওয়াইস্ ক্করণী (রহঃ) বলিয়াছেন, 

* যে ব্যক্তি খোদাকে চিনিয়াছে, তাঁহার নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। 
* নির্জনতা অবলম্বনেই শান্তি।
* অন্য চিন্তা মনে স্থান না পাইলেই তাওহীদের জ্ঞান লাভ হয়।
* একাকী থাকা উচিত নয়।
Read More
// // Leave a Comment

অবাক মৃত্যু

 একদা হযরত মানসূর হাল্লাজ (রহঃ) হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রহঃ) কে এক সওয়াল করেন। জুনায়েদ তাঁহার জওয়াব না দিয়া বলিলেন, “শীঘ্রই তুমি কাঠের অগ্রভাগ লাভ করিবে। ”
হুসায়েন বলিলেন, “যেদিন শূলের আগায় ঝুলিব, সেদিন আপনিও দরবেশের লেবাস ছাড়িয়া যাহেরী লোকের লেবাস পরিবেন। ”
যখন সমস্ত ধর্মবিদ-উলামা মানসূরকে কতল করার ফতোয়া দিলেন, তখন কেবল হযরত জুনায়েদ এই ফতোয়ায় দস্তখত করিলেন না, যেহেতু তিনি তখনও সূফীবেশে ছিলেন। খলীফা বলিলেন, “ফতোয়া সত্য হইলে হযরত জুনায়েদকে অবশ্যই দস্তখত করিতে হইবে। ” হযরত জুনায়েদ তখন খানকাহ্‌ হইতে উঠিয়া মাদরাসায় গেলেন এবং আলেমের লেবাস পড়িয়া ফতোয়ায় দস্তখত করিলেন। তিনি মন্তব্য লিখিলেন, “যাহেরী অবস্থামত মানসূর প্রাণদণ্ডের উপযুক্ত; আর, ফতোয়া যাহেরী অবস্থা অনুসারেই হইয়া থাকে। বাতেনী অবস্থা হক্ব তা’আলাই বিশেষরূপে জানেন। ”
কথিত আছে, তাঁহাকে যখন জেলখানায় বন্দী করা হইল- একরাত্রে জেলখানায় ৩০০ কয়েদী ছিল। তিনি সকল কয়েদীকে বলিলেন, “আমি তোমাদিগকে মুক্তি দিয়া দিব?” তাঁহারা বলিল, “কীরূপে? বাহ্‌! নিজেই বন্দী, আবার আমাদিগকে দিবেন মুক্তি! শক্তি থাকিলে আগে নিজকে মুক্ত করুন। ” তিনি বলিলেন, “আমি খোদার কয়েদী এবং শরীয়তের পায়রবি করি। অন্যথায়, ইচ্ছা করিলে তোমাদের সকল শিকল ছিঁড়িয়া ফেলিতে পারি। ” এই কথা বলিয়া তিনি আঙ্গুলে মাত্র ইশারা করিলেন, সঙ্গে সঙ্গে সকল কয়েদীর শিকল ছিঁড়িয়া গেল। তাহারা বলিল, “এখন আমরা বাহির হইব কীরূপে, জেলখানার দরজা যে বন্ধ?” আবার ইঙ্গিত করিলে জেলখানার দেওয়ালে কতকগুলি জানালা হইয়া গেল। তিনি বলিলেন, “হইল তো, যাও!” তাহারা বলিল, “আপনি আসিবেন না?” তিনি বলিলেন, “মালিকের সহিত আমার একটি গোপন ব্যাপার আছে, শূলে না চড়িয়া উহার সমাধান হইবে না। ”
পরদিন প্রহরী আসিয়া দেখিল, একটি কয়েদীও নাই। জিজ্ঞাসা করিল, “কয়েদীরা কোথায়?” তিনি উত্তরে বলিলেন, “আমি সকলকে মুক্তি দিয়া দিয়াছি। ” প্রহরী জিজ্ঞাসা করিল, “তবে আপনি কেন রহিয়া গেলেন?” তিনি বলিলেন, “আমার উপরে মালিকের ক্ষেদ আছে, সেইজন্যে অপেক্ষা করিতেছি। ” খলীফা এই সংবাদ পাইয়া বলিলেন, “যাও, যাইয়া শীঘ্র তাহাকে দোর্‌রা মারিয়া কতল করিয়া ফেল; এই গোলমাল মিটিয়া যাউক। অন্যথায়, ভীষণ গোলমাল ও ফাসাদের আশঙ্কা!” অতঃপর, তাঁহাকে বন্দীশালা হইতে বাহির করিয়া তিনশত দোর্‌রা মারা হইল। কিন্তু, ইহাতেও তিনি “আনাল হক্ব” উক্তি বন্ধ না করিয়া বরং উচ্চস্বরে ও দৃঢ়ভাবে আবৃত্তি করিতে রহিলেন। যে দোর্‌রা মারিতে ছিল- সে বলিল, আমি যখন মানসূরকে দোর্‌রা মারিতেছিলাম তখন প্রতিটি কশাঘাত হইতে স্পষ্ট আওয়ায শুনিতেছিলাম, “হে বৎস মানসূর! ভয় করিও না। ” 
তারপর তাঁহাকে শূলে চড়াইবার জন্য লইয়া যাওয়া হইল। ইহা দেখিবার জন্য প্রায় এক লক্ষ লোক জমায়েত হইল। তিনি প্রত্যেকের দিকে লক্ষ্য করিয়া বলিতে লাগিলেন, “হক্ব, হক্ব, আনাল হক্ব। ” ইতোমধ্যে একজন ফকির আসিয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “প্রেম কী?” তিনি উত্তরে বলিলেন, “তাহা আজ দেখিবে, কল্য দেখিবে এবং পরশুও দেখিবে। ” অর্থাৎ, প্রথম তাঁহাকে বধ করা হইবে, দ্বিতীয় দিন তাঁহার দেহ পোড়ান হইবে, তৃতীয় দিন তাঁহার ছাই বাতাসে উড়াইয়া দেওয়া হইবে- এইসবের প্রতি ইঙ্গিত করিয়া বলিয়া গিয়াছেন যে, ইহাই প্রেম। শূলে চড়াকালে তাঁহার খাদেম আসিয়া তাঁহার নিকট উপদেশ চাহিলে তিনি বলিলেন, “নিজকে কোন সৎকাজে মশগুল রাখিও, তাহা না হইলে নফস তোমাকে কোন বদ কাজে রত করিয়া ফেলিবে। ” তাঁহার পুত্র আসিয়া বলিল, আব্বা, আমাকে কিছু অছিয়ত করুন। তিনি বলিলেন, “বাবা, অছিয়ত এই- দুনিয়ার সবাই নেক আমলের চেষ্টায় লাগিয়া আছে; তুমি এমন কাজের চেষ্টা কর- যাহার এক রতি সারা দুনিয়ার মানুষ ও জ্বীনের আমল হইতে শ্রেষ্ঠ হয়- উহা আর কিছুই নহে- এলমে হাকীকতের এক কণা। ”
ইহার পর তিনি খুশীর সহিত ধীরে ধীরে শূলের দিকে যান। লোকে জিজ্ঞাসা করিল, “এই সময় এমন খুশীর কারণ কী?” তিনি বলিলেন, “এখন আমি আপন আস্তানার দিকে যাইতেছি। ইহার চেয়ে আমার পক্ষে আর খুশীর সময় কবে হইবে?” তারপর শূলের দিকে জোর গলায় এই কবিতার অংশ দুইটি পাঠ করিতে করিতে অগ্রসর হইতেছিলেনঃ (বঙ্গানুবাদ)
(১) “আমার বন্ধু আমার প্রতি মোটেই অবিচার করেন নাই। মেহমানকে যেমন পবিত্র ও উত্তম শরাব পান করান হয়, তিনিও আমাকে সেইরূপ শরাবই (প্রেমের শরাব) পান করাইয়াছেন। ”
(২) “শরাবের পাত্র কয়েকবার ঘুরানোর অর্থাৎ কয়েকবার পান করার পর কোষ ও তরবারিসহ আগাইবার জন্য বন্ধু আমাকে সাদরে আহবান জানাইলেন। আর, ইহাই ঐ ব্যক্তির সমুচিত সাজা, যে গরমের দিনে অজগরের সঙ্গে বসিয়া পুরাতন শরাব পান করে। ”
পরে তাঁহাকে শূলের নিকট আনা হইলে তিনি শূলের সিঁড়ি চুম্বন করিলেন এবং পরে শূলের সিঁড়িতে পা রাখিয়া বলিলেন, “বীরপুরুষের মে’রাজ শূল দন্ড। ” এই সময় কেবলার দিকে মুখ করিয়া হাত উঠাইয়া মোনাজাত করিলেন এবং বলিলেন, “যাহা চাহিয়াছিলাম, তাহা পাইয়াছি। ” যখন তিনি শূলে চড়িলেন, তখন তাঁহার মুরিদগণ জিজ্ঞাসা করিল, “হুজুর, যাহারা আপনার সহিত এরূপ নিষ্ঠুর ব্যবহার করিল, তাহাদের সম্বন্ধে এবং আমরা ও অন্যান্য যাহারা আপনার সমর্থন করি, তাহাদের সম্বন্ধে আপনার অভিমত কী?” উত্তরে বলিলেন, “যাহারা আমার সহিত নিষ্ঠুর ব্যবহার করিল, তাহাদের দ্বিগুণ সওয়াব (পূণ্য) হইবে; আর, যাহারা আমার সমর্থন করিতেছ, তাহাদের জন্য এক সওয়াব; কেননা, তোমরা কেবল আমার সম্বন্ধে ভাল ধারণাই পোষণ কর; আর তাহারা তাওহীদের শক্তি এবং শরীয়তের কঠোর বিধান- এই দু’য়ের তাড়নায় জর্জরিত হইতেছে। আর, ইসলাম ধর্মে তাওহীদ আসল; সুধারণা তাহার শাখা মাত্র। ”
কথিত আছে, মানসূর যৌবনকালে কোন স্ত্রীলোকের প্রতি নযর করিয়াছিলেন। শূলে চড়িবার পর সেই কথা স্মরণ করিয়া বলিলেন, “হায়, কী অশুভ কীর্তি আমার ঘটিয়াছিল; দীর্ঘদিন পর যাহার প্রতিশোধ আমা হইতে লওয়া হইতেছে। ”
তারপর, হযরত শিবলী (রহঃ) তাঁহার নিকট আসিয়া উচ্চস্বরে বলিলেন, “হে হাল্লাজ, তাছাউওফ বা ফকিরি কী?” উত্তরে বলিলেন, “যাহা তুমি দেখিতেছ, ইহা তাছাউওফের নিম্ন শ্রেণি মাত্র। ” হযরত শিবলী বলিলেন, তবে উচ্চ শ্রেণী কোনটি? তিনি বলিলেন, “সেই পর্যন্ত তুমি পৌঁছিতে পার নাই। ” ইহার পর লোকেরা তাঁহার প্রতি পাথর ছুঁড়িতে আরম্ভ করিল। হযরত শিবলী অন্যের দেখাদেখি মাত্র একটি মাটির ঢিল ছুঁড়িলেন- তখনই মানসূর একটি হৃদয় বিদারক “আহ্‌” বলিয়া চিৎকার করিয়া উঠিলেন। লোকে জিজ্ঞাসা করিল, এত লোকে আপনার উপর পাথর ছুঁড়িতেছে; তাহাতে কোন দুঃখ প্রকাশ করিলেন না- আর, এ সামান্য মাটির ঢিলে কেন এরূপ চিৎকার করিয়া উঠিলেন?” মানসূর বলিলেন, “তাহারা অজ্ঞান বলিয়া পাথর মারিতেছে, সুতরাং ইহাতে দুঃখ নাই; পক্ষান্তরে, হযরত শিবলী (রহঃ) আমার সম্বন্ধে বেশ জানেন, তাঁহার ঢিল ছুঁড়া সাজে না; তাঁহার সামান্য ঢিলেও মনে ভীষণ আঘাত লাগে। ”
ইহার পর শূলে প্রথমে তাঁহার হাত কাটা হইল (হাতের কবজা পর্যন্ত)। ইহাতে তিনি বলিলেন, “এই যাহেরী মানুষটির হাত কাটা সহজ বটে; কিন্তু, আমার বাতেনী হাত যাহা আরশের উপর হইতে গৌরবের তাজ টানিতেছে, তাহা কাটিবার কে আছে?” তারপর তাঁহার পা কাটিয়া হইল। তিনি হাসিমুখে বলিলেন, “যদিও এই যাহেরী পায়ের সাহায্যে দুনিয়ায় চলাফেরা করিয়াছি; কিন্তু আমার অপর পা আছে, যাহার সাহায্যে আমি বেহেশতে চলাফেরা করিতে পারিব। যদি শক্তি থাকে তবে উহা কাটিয়া ফেল দেখি?” এই বলিয়া শরীরে খুন হাতে লইয়া মুখে মাখিতে লাগিলেন। লোকে জিজ্ঞাসা করিল, “এরূপ করিতেছেন কেন?” তিনি বলিলেন, “আমার শরীর হইতে অনেক খুন বাহির হওয়ায় মুখ সাদা হইয়া গিয়াছে। ইহাতে হয়তো তোমরা মনে করিবে, ভয়ে এরূপ সাদা হইয়াছে। এজন্য খুন মুখে মাখিলাম, যেন লোকের নযরে আমার মুখ লাল দেখায়; কেননা, বীর পুরুষের মুখের রক্তিম রঙ তাহার খুনের সাহায্যেই হয়। ” লোকে জিজ্ঞাসা করিল, “হাতে রক্ত মাখিতেছেন কেন?” তিনি বলিলেন, “ওযু করিতেছি। ” লোকে বলিল, “ এ কীরূপ ওযু?” তিনি বলিলেন, “দুই রাক’আত এশকের নামায আছে, যাহা খুন দ্বারা ওযু ছাড়া শুদ্ধ হয় না। ” তারপর, তাঁহার চোখ দুইটি উঠাইয়া ফেলা হইল। ইহা দেখিয়া জনসাধারণের মধ্যে কান্নার রোল উঠিল। কেহ কাঁদিল, কেহবা তখনও পাথর নিক্ষেপ করিতে লাগিল। তারপর তাঁহার জিহবা কাটিতে চাহিলে তিনি বলিলেন, “একটু ধৈর্য ধর। আমি কিছু কথা বলিব। ” তিনি উপরের দিকে চাহিয়া বলিলেন, “এলাহী, ইহারা আমাকে যে তোমার জন্য এত দুঃখ দিল, ইহাদিগকে তোমার রহমত হইতে বঞ্চিত করিও না; সেই সম্পদ হইতে তাহাদিগকে নিরাশ করিও না। আলহামদুলিল্লাহ্‌! যদিও তাহারা আমার হাত-পা কাটিতেছে, তথাপি তাহারা তোমারই পথে। যদি তাহারা আমার মাথাও কাটিয়া ফেলে, তথাপি উহা তোমার রূপ দেখিবার আকাঙ্ক্ষায়ই করিতেছে। ” ইহার পর তাঁহার কান ও নাক কাটিয়া ফেলা হইল এবং তাঁহার উপর লোকে পাথর নিক্ষেপ করিতে লাগিল; তাঁহার শেষ বাণী এই ছিলঃ
“আমি তাওহীদের আশেক। তাওহীদের মহব্বত হইল এক কে একক জানা এবং অন্য কাহাকেও সেখানে স্থান না দেওয়া। ” ইহার পর এই আয়াত শরীফ পাঠ করিলেনঃ (বঙ্গানুবাদ) “যাহারা ঈমান আনয়ন করেনা ও কেয়ামতকে অবিশ্বাস করিয়া উহাকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে; অথচ, অন্তরে জানে যে, উহা নির্ঘাত সত্য- তাহারাই হাস্য করিয়া নবী (সাঃ) কে শীঘ্র কেয়ামত আনিয়া দেখাইতে বলে। পক্ষান্তরে, যাহারা ঈমান আনিয়া ঐ (ভয়ঙ্কর দিনের নাম শুনিলে) ভয়ে ভীত হয় ও কুকর্ম হইতে বিরত থাকে, তাহারাই কেয়ামতকে সত্য বলিয়া জানে ও প্রাণে বিশ্বাস করে। ”
ইহাই তাঁহার সর্বশেষ বাণী ছিল। তারপর তাঁহার জিহবা কাটা হইল। দিন শেষ হইল। সন্ধ্যা হইল। খলীফার হুকুম জারী হইল, “শরীর হইতে তাঁহার মাথা ছিন্ন করিয়া ফেল। ” হুকুমমত মাথা কাটিবার সময় তিনি উচ্চস্বরে হাস্য করিতে লাগিলেন। ঐদিকে লোকদের মধ্যে কান্নার রোল উঠিল। দেখিতে দেখিতে তাঁহার জীবন শেষ হইল বটে; কিন্তু, তাঁহার প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হইতে “আনাল হক্ব” আওয়ায হইতে লাগিল। তারপর, প্রত্যেক অঙ্গকে খন্ড-বিখন্ড করা হইল। কেবল গলা ও পিঠ বাকী রহিল। তখন প্রত্যেক টুকরা হইতে “আনাল হক্ব” আওয়ায উঠিতে লাগিল। তাঁহাকে কতল করার সময় যে রক্তবিন্দুটি মাটিতে পড়িত, উহাও “আনাল হক্ব” এর আকৃতি ধারণ করিত! দ্বিতীয় দিন এ অবস্থা দেখিয়া লোকে অবাক হইয়া বলিতে লাগিল, “আগে এক মুখে “আনাল হক্ব” বলিত; আর এখন শতমুখে উচ্চারিত হইতেছে। ” এই বিপদ দেখিয়া হতবুদ্ধি হইয়া মালিকপক্ষ মানসূরের সমস্ত শরীর আগুনে পুড়াইয়া ফেলিল। কিন্তু, ইহাতে বিপদ আরও বৃদ্ধি পাইল। প্রত্যেক ছাইয়ের রেণু হইতে “আনাল হক্ব” আওয়ায উঠিয়া শহর, মাঠ-ঘাট মুখরিত করিয়া তুলিল। অবশেষে উপায় না দেখিয়া খলীফা ছাইগুলি দিজলা নদীতে ফেলিয়া দিবার হুকুম করিলেন। কিন্তু আশ্চর্য! ছাই ফেলার পর নদীর পানিতে ঢেউয়ের পর ঢেউ প্রবল হইতে প্রবলতর আকার ধারণ করিতে লাগিল এবং প্রত্যেকটি ঢেউয়ের সহিত উচ্চ রব উঠিতে লাগিল “আনাল হক্ব, আনাল হক্ব। ” নদীতে তুফান আর ঢেউয়ের ভীষণ আকার দেখিয়া লোকজনের প্রাণে আতঙ্কের সৃষ্টি হইল। কতলের পূর্বেই মানসূর নিজের একজন চাকরকে বলিয়াছেন, আমার দেহের পোড়া ছাইগুলি যখন নদীতে ফেলিয়া দেওয়া হইবে, তখন বাগদাদ নগরে কেয়ামতের মত অবস্থার সৃষ্টি হইবে। নগর রক্ষার কোন উপায় না দেখিলে আমার খেরকাটি নিয়া দিজলা নদীকে দেখাইও; ইহাতেই নদী শান্ত হইবে। ” চাকর নদীর ভয়াবহ অবস্থা দেখিয়া তাহাই করিল। আগুনের মধ্যে পানি ফেলিলে যেমন মুহূর্তের মধ্যে উহা নিভিয়া যায়, সেইরূপ খেরকা দেখার সঙ্গে সঙ্গে নদী শান্তভাব ধারণ করিল এবং নিক্ষিপ্ত ছাইগুলি আসিয়া নদীর কিনারায় জড় হইল- সেই ছাই কুড়াইয়া আনিয়া দাফন করা হয়। সত্যিই, কোন তাপসই উক্ত পথে তাঁহার ন্যায় জয়ী হইতে পারেন নাই। ”
-তাযকেরাতুল আওলিয়া। (দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ২২৬- ২৩৫)

Image by Myléne from Pixabay ***

Read More
// // Leave a Comment

হযরত হুসায়েন মানসূর হাল্লাজ (রহঃ)

 হযরত হুসায়েন মানসূর হাল্লাজ (রহঃ) তরঙ্গবিশিষ্ট প্রেম নদীর দুঃসাহসী ডুবুরী ও সত্যের অরণ্যে সিংহস্বরূপ ছিলেন। আল্লাহ্‌ পাকের রাস্তায় নানা ক্লেশ ও যন্ত্রণা ভোগ করিয়া তিনি নিহত হন। তাঁহার জীবনে নানা অদ্ভূত ও অত্যাশ্চর্য ঘটনাবলী ঘটিয়াছে।
Read More