Wednesday, December 13, 2017

// // Leave a Comment

দরবেশ ও বাঘ

ইংরেজগণ এই উপমহাদেশের একটি অকৃতজ্ঞ জাতিকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। আর, অপর একটি কৃতজ্ঞ জাতিকে পশ্চাৎপদ করে রেখেছিল; কিন্তু, এর ফল যা হয়েছিল তা দেখে পরবর্তীকালে এই ইংরেজগণ শত আফসোস আর দুঃখ করেছে।
   এক উচ্চ পর্যায়ের ইংরেজ হাকিম গোরক্ষপুরে সফরে গিয়েছিলেন। সেখানকার জমিদারের ম্যানেজারের কাছে এ প্রসঙ্গে তিনি দুঃখ করে একটি ঘটনা বলেছিলেন। ঘটনাটি হলো নিম্নরূপঃ

      নির্জন কক্ষে এক দরবেশ বাস করতেন। সেই কক্ষে এক ইঁদুর এসে বাচ্চা প্রসব করলো। পরে দরবেশকে দেখতে পেয়ে সব কয়টি পালিয়ে গেল। কিন্তু, একটি ইঁদুরের বাচ্চা রয়ে গেল। বুজুর্গের দয়া হলো। তিনি বাচ্চাটিকে দুধ ইত্যাদি পান করাতে লাগলেন। একদিন দেখলেন বাচ্চাটি মন ভার করে বসে আছে। তিনি তার দুঃখের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।
      বাচ্চা বললো, “আজ একটা বিরাট ইঁদুর আমাকে ধাওয়া করেছিল, আজ কোন রকমে প্রাণ বাঁচিয়েছি; কিন্তু একদিন সে আমার উপর জয়ী হবে এবং আমার প্রাণ বধ করবে। তাই আমার দুঃখ।”
      বুজুর্গ বললেন, “তাহলে আমি এখন তোর জন্যে কী করতে পারি?”
      সে বললো, “আমাকে বিড়াল বানিয়ে দিন।”
      বুজুর্গ তখন আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করলেন এবং তার শরীরে হাত বুলালেন; সঙ্গে সঙ্গে সে একটি বিড়ালে পরিণত হয়ে গেল।
      কয়েকদিন পর দরবেশ দেখলেন বিড়ালটি বিমর্ষ মনে বসে আছে। তিনি আবার তার দুঃখের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।
      বিড়াল বললো, “আজ মহল্লার গলিতে গিয়েছিলাম। এক কুকুর আমাকে তাড়া করেছিল। বড় কষ্ট করে প্রাণ বাঁচিয়ে এসেছি। কিন্তু এভাবে কতদিন প্রাণ বাঁচাতে পারবো; তাই আমি চিন্তিত।”
      দরবেশ বললেন, “তাহলে তুই এখন কী চাস?”
      বিড়াল বললো, “আমাকে কুকুর বানিয়ে দিন।”
      বুজুর্গ আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন এবং বিড়ালের গায়ে হাত বুলালেন- অমনি বিড়াল কুকুর হয়ে গেল।
      পাঁচ সাত দিন পর দেখলেন কুকুরটি বিষণ্ণ মনে বসে আছে। তিনি কারণ জিগাসা করলেন।
      কুকুর বললো, “আজ আমি জঙ্গলে গিয়েছিলাম; সেখানে একটি নেকড়ে আমার উপর হামলা করেছিল।”
      বুজুর্গ বললেন, “তাহলে এখন তুই কী চাস?”
      সে বললো, “আমাকে নেকড়ে বানিয়ে দিন।”
      বুজুর্গ দোয়া করে তার উপরে হাত বুলালেন। আর অমনি কুকুরটি নেকড়ে হয়ে গেল।
       কয়েক দিন পর দেখলেন আবার সে মন খারাপ করে বসে আছে।
       বুজুর্গ জিজ্ঞাসা করলেন, “মন খারাপ হওয়ার কারণ কী?”
       সে বললো, “আমি জঙ্গলে গিয়েছিলাম সেখানে একটি বাঘ আমাকে ফেড়ে খাওয়ার জন্যে তাড়া করেছিল।”
       বুজুর্গ বললেন, “এখন তবে তুই কী চাস?”
       সে বললো, “আমাকে বাঘ বানিয়ে দিন।”
       দরবেশ আল্লাহর দরবারে দোয়া করে তার গায়ে হাত বুলালেন তখন সে একটি বাঘ হয়ে গেল।
       বাঘ হয়ে সে মনের আনন্দে জঙ্গলে গেল। জঙ্গলে যেতেই আগের সেই বাঘটি তাকে দেখে বলে উঠলো- “আরে বহুরূপী! খুব রূপ বদলিয়েছিস বটে, কিন্তু তোর মধ্যে আর আমার মধ্যে এখনও পার্থক্য রয়েছে। তুই হলি মানুষের তৈরি বাঘ, আর আমি হলাম আল্লাহর তৈরি বাঘ। (দরবেশের তাছাররুফের মাধ্যমে তৈরি বাঘ আর,) আল্লাহর তৈরি আসল বাঘের ক্ষমতা এখনই পরীক্ষা হবে। হাকীকত এখনি খুলে যাবে দাঁড়া!”
       এই কথা শুনে সে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো, “তাহলে আমার প্রাণে বাঁচার কি কোন পথ নাই?”
       বাঘ বললো, “একটি মাত্র পথ আছে। আগে তুই তাকে খতম করে আয়, যে খোদার উপর খোদকারী করেছে- তোকে ইঁদুর থেকে বাঘ বানিয়েছে। আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে যে হস্তক্ষেপ করেছে, তাকে খতম করলেই তোকে ছাড়বো।”
        সে চললো। জঙ্গল থেকে দরবেশের কামরায় এসে উপস্থিত হলো। বুজুর্গ দেখলেন, সে নখ বাহির করে থাবা প্রস্তুত করে সামনে এসে ঘড় ঘড় করছে।
        সে বললো, “আজ তোমাকে খাবো।”
        বুজুর্গ বললেন, “আমার আগের সকল দয়া এবং উপকারের কথা কি ভুলে গেছিস?”
        সে বললো, “ ধেৎ তোর উপকার! এখন আমার জান যায়, উপকারের কথা ভেবে জান হারাতে পারি না। সেই বাঘের সঙ্গে আবার দেখা হয়েছে। সে হলো আসল বাঘ। আর, আমি যে ইঁদুর থেকে বাঘের রূপ ধরেছি, তা সে জানতে পেরেছে। আমাকে বলেছে, “আল্লাহর সৃষ্টিতে যে হস্তক্ষেপ করে তোকে ইঁদুর থেকে বাঘ বানিয়েছে, তাকে খতম করে আয়; না হলে তোর রক্ষা নাই।”
        বুজুর্গ বললেন, “ও আচ্ছা! এই কথা? ঠিক আছে, তুমি বসো,স্থির হও। তোমার জান রক্ষা হবে। আমি ব্যবস্থা করছি।”
        তখন, এই বাঘ স্থির হয়ে বসলো। বুজুর্গ সুযোগ পেয়ে দোয়া করলেন এবং তার গায়ে হাত বুলালেন। অমনি বাঘ আবার ইঁদুর হয়ে গেল। সকল বিশৃঙ্খলা দূর হয়ে আবার শান্তি ফিরে আসলো।
        এই ঘটনা ব্যক্ত করে সেই হাকিম সাহেব বললেন, “এটা আমাদেরই দোষ যে আমরা এই অকৃতজ্ঞ জাতিকে অগ্রসর করতে করতে এমন এক স্থানে পৌঁছিয়ে দিয়েছি, যেখানে দাঁড়িয়ে আজ তারা আমাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছে। এই জাতিটি বাস্তবিকই অকৃতজ্ঞ।
         সুতরাং, এই ঘটনা থেকে মুসলমানদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
আল ইফাযাতুল ইয়াওমিয়্যাহ। (খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৯৮)

0 Comments:

Post a Comment