Thursday, June 14, 2018

// // Leave a Comment

স্বীকারোক্তি

 এক ব্যক্তি হযরত ঈসা (আঃ) এর খেদমতে সফরে রওয়ানা হলো। ঈসা (আঃ) এর সঙ্গে তিনটি রুটি ছিল। এক নদীর তীরে পৌঁছে তিনি দুইটি রুটি আহার করলেন এবং পানি পান করার জন্যে নদীতে গেলেন। ফিরে এসে দেখেন অবশিষ্ট একটি রুটি নাই।
তিনি সেই লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “রুটি কে নিয়েছে?”
লোকটি বললো, “আমি জানিনা। ”
তিনি লোকটিকে নিয়ে আবার রওয়ানা হলেন। রাস্তা চলতে চলতে যখন ক্ষুধার উদ্রেক হলো তখন তিনি দূরে একটি হরিণী দেখতে পেলেন।
তার সঙ্গে দুইটি বাচ্চা ছিল। তিনি একটি বাচ্চাকে ডাকলেন। বাচ্চাটি কাছে আসলো। তিনি তাকে জবাই করলেন এবং ভূনা করে সেই লোকটিকে নিয়ে আহার করলেন। অতঃপর বললেন, “আল্লাহর হুকুমে জিন্দা হয়ে যাও। ” সঙ্গে সঙ্গে হরিণের বাচ্চা জিন্দা হয়ে চলে গেল। 
ঈসা (আঃ) লোকটিকে বললেন, “এই হরিণের বাচ্চা জিন্দা হয়ে যাওয়ার মোজেযা যিনি দেখালেন তাঁর কসম দিয়ে বলছি, তুমি বল রুটিটি কে নিয়েছে?”
লোকটি বললো, “আমি জানি না। ”
তিনি লোকটিকে নিয়ে আবার রওয়ানা হলেন। পাহাড় থেকে ঝর্ণা হয়ে নেমে আসা একটি নদী সামনে পড়লো। তিনি লোকটির হাত ধরে পানির উপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হয়ে গেলেন। 
অতঃপর, তিনি বললেন, “যিনি বিনা নৌকায় নদী পার হওয়ার এই মোজেযা দেখালেন তাঁর কসম দিয়ে বলছি, তুনি বল রুটি কে নিয়েছে?”
লোকটি আগের মতই জওয়াব দিল, “আমি জানি না। ”
হযরত ঈসা (আঃ) অতঃপর এক জঙ্গলের কাছে পৌঁছে বালি জমা করতে শুরু করলেন। যখন এক বিরাট বালির স্তুপ হয়ে গেল, তখন সেই স্তুপকে লক্ষ্য করে বললেন, “আল্লাহর হুকুমে সোনা হয়ে যাও। ”
তখনই বালির স্তুপটি সোনা হয়ে গেল। 
তিনি সেই সোনাকে তিন ভাগ করলেন এবং লোকটিকে লক্ষ্য করে বললেন, “এই তিন ভাগ সোনার মধ্যে এক অংশ আমার, আর এক অংশ তোমার এবং অপর অংশটি যে রুটি নিয়েছে তার। ”
এই কথা শুনে লোকটি তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো, “রুটি তো আমিই নিয়েছিলাম। ”
হযরত ঈসা (আঃ) বললেন, “তাহলে তুমি সব সোনাই নিয়ে যাও। ”
এই বলে লোকটা থেকে পৃথক হয়ে তিনি চলে গেলেন। 
লোকটি তিন ভাগ সোনার সবগুলি একা পেয়ে মনের আনন্দে জঙ্গলের ধারেই অবস্থান করতে লাগলো। এমন সময় দুই ব্যক্তি এসে তার সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য তাকে হত্যা করতে উদ্যত হলো। 
লোকটি বললো, “লড়াই করার মধ্যে হেরে যাওয়ার ভয় সবারই আছে। তাই, লড়াই না করে এসো আমরা এই সম্পদ সমান তিন ভাগ করে নিই। তোমরা একজন বাজারে গিয়ে কিছু খাবার নিয়ে এসো। ক্ষুধা নিবৃত্তি করার পর মাল ভাগ করা যাবে। ”
সুতরাং, তার প্রস্তাবে তারা রাজি হলো এবং সেই দুইজনের মধ্যে এক ব্যক্তি খাবার আনতে বাজারে গেল এবং মনে মনে ভাবলো, খাবারের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দিলে এই দুইজন মারা যাবে; তখন সমস্ত সোনা আমার একার হয়ে যাবে। এই ভেবে সে খাবারের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দিল। 
এদিকে এরা দুইজন পরামর্শ করলো যে, এই তৃতীয় ব্যক্তিটিকে যদি মেরে ফেলা হয়, তবে সমস্ত সোনা তাদের দুই জনের ভাগে বেশি করে পড়বে। তাই, লোকটি বাজার থেকে ফিরে আসতেই তাকে মেরে ফেলতে হবে। 
সুতরাং, লোকটি যখন খাবার নিয়ে ফিরে আসলো, তখন দুইজন মিলে তাকে হত্যা করে ফেললো এবং মনের আনন্দে খাবার খেতে লাগলো। খাবার খাওয়া শেষ হতে না হতেই বিষের প্রতিক্রিয়ায় দুইজন সেখানে মারা পড়লো। 
সোনার তিনটি স্তুপই যেমনকার তেমনি সেখানে পড়ে রইল। কেউ পেল না। তিন জনের লাশই সোনার পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকলো। 
ঘটনাক্রমে হযরত ঈসা (আঃ) আবার সেই রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি এই দৃশ্য দেখে সবাইকে ডেকে ডেকে বললেন, “দেখ, সম্পদের হাকীকত এই। এর লোভ থেকে নিজেকে বাঁচাও। ”
-কাছাছুল আওলিয়া। [খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ১০০১]
***

0 Comments:

Post a Comment